চট্টগ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বিফলে ১৪ হাজার কোটি টাকার দুই প্রকল্প

এখন জনপদে
0

চট্টগ্রামে খাল খনন আর জলাবদ্ধতা প্রকল্পে চারটি সংস্থার ব্যয় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এ ব্যয় আর বিশাল কর্মযজ্ঞের কোনো সুফল মিলছে না শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে। ৬০ লাখ লোকের এ নগরীতে বর্জ্য সংগ্রহে করপোরেশনের আছে মাত্র ৫০ টি যানবাহন, হাতেগোনা কয়েকটি বুলডোজার। নগরীর অনেক এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহে ঘরে যায়না করপোরেশনের কর্মী, হাঁটা দূরত্বে নেই ডাস্টবিনও, তাই শেষমেশ বর্জ্যের ঠাঁই হয় খাল বা নালায়। গত ২০ বছর চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটি করার ফুলঝুরি ছড়ালেও, আদতে তা কতটুকু করেছেন মেয়ররা?

নগরের দক্ষিণ বাকলিয়ার অসি মিয়া সড়কে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষের বাস। যাদের ময়লা ফেলায় একমাত্র ভরসা দুটি ভ্যান। স্থানীয়দের উদ্যোগে এসব ভ্যান এলাকা ঘুরে সর্বোচ্চ ৮০ ঘরের ময়লা সংগ্রহ করে। বাকি প্রায় হাজার পরিবারের ময়লা যায় আশপাশের খাল-নালায়।

করপোরেশনের প্রধান কাজের একটি আবর্জনা পরিষ্কার হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, ৩০ বছর ধরে বাকলিয়ার এই অংশে পৌঁছায়না তাদের কোনও ময়লার গাড়ি বা সেবা। অথচ এ সময়ে নির্বাচিত সব মেয়রই গ্রিন আর ক্লিন সিটির আশ্বাস দিয়েছেন।

বাকলিয়ার মির্জা খালের এমন ভাগাড় হওয়ার দৃশ্য বলে দেয় এই নগরে কত শত টন বর্জ্য কর্তৃপক্ষের হিসেবে বাইরে থেকে যায়। রয়ে যায় সংগ্রহের বাইরের খাতায়।

কাগজে কলমে চট্টগ্রামে দৈনিক আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদনের কথা বলা হলেও বাস্তবে সেই পরিমাণ আরও বেশি। এই আশঙ্কাজনক হার কর্তৃপক্ষের বর্জ্য সংগ্রহের সক্ষমতাকে দিন দিন যেমন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জে ফেলছে তেমনি আরও বেশি হুমকিতে ফেলছে খাল নালার পানি প্রবাহকে।

জলাবদ্ধতা রোধে তিন সংস্থার চার প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বেড়ে বাজেট ঠেকেছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকায়। যেখানে এরমধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে ৮ হাজার কোটিরও বেশি। তবে এ বিশাল ব্যয় আর কর্মযজ্ঞের সুফল মিলছেনা শুধুমাত্র বর্জ্যের অব্যবস্থাপনায়। কারণ খাল-নালায় বর্জ্যের উৎস বন্ধ করতে বা নাগরিকদের আবর্জনা সংগ্রহে কর্পোরেশনের বাজেট ও সক্ষমতা নামমাত্র। বিগত ১০ বছরে যেখানে বাজেট ছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। তাই প্রতিবছরই ভয়াবহ হচ্ছে জলাবদ্ধতা, থামছে না খাল নালা ও নদী ভরাট হওয়া।

৬০ লাখ মানুষের ময়লা ফেলতে নগরীতে মাত্র অর্ধশতাধিক ডাম্প ট্রাক, ধারণক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে আসা দুটি ডাম্পিং ইয়ার্ড, হাতেগোনা কয়েকটি এক্সক্যাভেটর, কিংবা সীমিত জনবলই করপোরেশনের ভরসা। এরইমধ্যে বৃহৎ জলাবদ্ধতা প্রকল্প ও খাল খনন ঘিরে আগের সরকারের দুর্নীতি, অর্থ লুটপাটও রয়েছে আলোচনায়। তবে সংকট নিরসনে বেশ সরব নতুন মেয়র।

তবে গবেষকরা বলছেন, কেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করা গেলে বছর বছর কোটি কোটি টাকা খরচের প্রয়োজন হতোনা।

নগরে যে পরিমাণ বর্জ্য পাওয়া যায় তা থেকে দিনে উৎপাদন করা যেতো ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, খাদ্য বর্জ্য থেকে পাওয়া যেতো শত শত টন জৈব সার বা জ্বালানি, প্লাস্টিক-পলিথিনকে রূপান্তর করা যেতো অসংখ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রীতে।

অথচ এক দশক ধরে নানা পরিকল্পনা, প্রস্তাবনা, বা চুক্তি বাস্তবে রূপ না পাওয়ায়, বর্জ্য এই নগরে সম্পদ নয়, থেকে গেছে জলাবদ্ধতার ভূত হয়ে। এক যুগে জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এর জন্য দায়ী যে বর্জ্য সেই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা বা রিসাইক্লিংয়ে নেয়া হয়নি কার্যকর কোন প্রকল্প বা বড় কোন বাজেট।

তাই প্রশ্ন উঠেছে এই নগরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলা বর্জ্য সংকটের টেকসই কোন সুরাহা না করে জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে শত মাথাব্যথার আদৌ কোন সুফল মিলবে কী না?

বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরির এই জরাজীর্ণ প্ল্যান্ট করপোরেশনের রিসাইক্লিং প্রকল্পের একমাত্র উদাহরণ। ২০০৮ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পে নতুন করে কোনও বিনিয়োগ হয়নি।

উন্নত যন্ত্রপাতি, নতুন বিনিয়োগের অভাবে লোকসান কাঁধে নামমাত্র চলছে এ কার্যক্রম। যদিও করপোরেশন বলছে নতুন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও সক্ষম করতে কাজ শুরু করেছেন তারা। প্রাধান্য পাচ্ছে আধুনিক রিসাইক্লিং প্রকল্পও।

গত দশ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাথে চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করলেও, কোনও প্রকল্পই দেখেনি আলোর মুখ।

এএইচ

আরও পড়ুন:
এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর
No Article Found!