ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে: গভর্নর
ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আজ (রোববার, ৫ মে) দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুই দিনব্যাপী 'ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স' এ যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিনজন গভর্নর বর্তমান মুদ্রানীতি, রিজার্ভ সংকট এবং আর্থিক নীতিসহ বেশকিছু বিষয়ে সমালোচনার পাশাপাশি পরামর্শও দেন। এসময় তারা টাকার মান, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ দেন।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মুদ্রানীতি এবং কিছু আর্থিক নীতির সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়েছে। ব্যাংকের স্মার্ট সুদহার উঠে যাবে এবং বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।’

সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফরেন রিজার্ভ কমার কারণ হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার সরবারহ কমে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে শুধু মুখে বললে কেউ বিনিয়োগ করবে না। আর ব্যবস্থা না নিলে ফরেন রিজার্ভ বাড়ানো যাবে না। একইসঙ্গে আইএমএফের সব কথা শোনা যাবে না। তারা ভর্তুকি তুলে দিতে বলছে, এগুলো শোনা যাবে না। এগুলো আমাদের দেশে দরকার আছে।’

আর মুদ্রানীতিতে পলিসিগত সমস্যা আছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, সংকোচন মুদ্রানীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘বর্তমানে মুদ্রানীতি সুদহার ও পলিসি বা রেপো রেট লক্ষ্য করে‌ হয়। এর আগের মুদ্রানীতিগুলো রিজার্ভ, সার্বিক মুদ্রা বাজারের বিষয়কে লক্ষ্য করে হতো। আর মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন।’

আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এম তারেক বলেন, ‘টাকার মান, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক রাখতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

করোনা পরবর্তী সময় বিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়া এবং রিজার্ভ কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বাজেটের ঘাটতি পূরণে বড় একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিতে শুরু করে সরকার।

এতে চাহিদা অনুযায়ী তারল্য সরবরাহ কমে যেতে শুরু করলে তা পূরণে টাকা ছাপায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এর চাপ পড়ে মূল্যস্ফীতির উপর এবং ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে তারল্য ঘাটতি দেখা দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে এবং তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধিতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষেত্রে সুদহারের সীমা তুলে নেয়া এবং মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনে সংস্থাটি। এতে স্মার্ট সুদ হার নামে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়।

নতুন এ পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে সুদহার ১৪ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে আমানতে ব্যাংকগুলো ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এর ঋণের বিপরীতে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশের কিছুটা বেশি সুদ নিচ্ছে।

একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সরকারকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে সরকার। এতো কিছুর পরও যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না, তখন বেসরকারি খাত এবং তারল্যের কথা চিন্তা করে খোলা বাজারে সুদ হার ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এসএসএস