কৃষি , শস্য
দেশে এখন
0

বরিশালে জলাবদ্ধতায় ব্যাহত আমনের বীজতলা উৎপাদন

বরিশালের কৃষকদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে আছে। আমনের বীজতলা তৈরির কাজ চলছে সর্বত্র। তবে কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষক। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, আমনের উৎপাদন ঠিক রাখতে তৎপর রয়েছেন তারা। আর চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভালো হতে হবে আমনের ফলন।

বরিশালের কৃষকদের যেন দম ফেলারও সময় নেই। কেউ জমির জঞ্জাল পরিস্কার করছেন। কেউ ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করছেন। কেউ আবার বীজতলা তৈরি করছেন। বরিশাল অঞ্চলে আমনের মৌসুম শুরু হয় উত্তর অঞ্চলের চেয়ে কিছুদিন পরে। তাই এখনও আমনের বীজতলা তৈরির কাজ চলছে।

উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বরিশালে ঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। সব বাধা পেরিয়ে আমনের উৎপাদন ভালো করতে মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষক।

একজন কৃষক বলেন, 'আগাছা পরিস্কার করতেছি। তারপর আমি আমন ধানের বীজ ফেলাবো। ভাদ্র মাসে এগুলো লাগাবো। তাহলে পৌষ মাসে ধান হয়ে যাবে।'

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বরিশালের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছ। বরিশাল বিভাগে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫৯ কৃষককে ৫ কেজি আমনের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, এবং ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। বরিশাল জেলায় এ সুবিধা পেয়েছেন ২৯ হাজার ৬০০ জন।

একজন কৃষক বলেন, 'এবার ঝড়ের কারণে ফসল নষ্ট হইছে। এখন যে সার, ধান দিচ্ছে, এতে আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।'

আমনের বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা ধান ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর ঢেকে রাখতে হয় বীজগুলো। এতে ধানগুলো অঙ্কুরিত হয়। এসময় বীজতলা তৈরি করে ধান ছিটানো হয়। এর ২৫ থেকে ৩০ দিন পর ধানের চারা রোপণ করতে হয়। সময়মতো ধান রোপণ করা গেলে ধানের ফলন ভালো হয়।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, 'বৃষ্টির কারণে, জলাবদ্ধতায় অনেক জায়গায় বীজতলা উৎপাদনে ব্যাঘাত হচ্ছে। সে জায়গাগুলোতে পানি বের করে দিয়ে বীজতলা ভালো রাখার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।'

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান বলেন, 'চারদিকে আইল বেধে পানি সেচে বীজতলা তৈরি করছে। আমরা এ বছরও গতবারের তুলনায় যে ফলন পেয়েছি তার চেয়ে এ বছর উৎপাদন বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯২ টন আমন চাল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভোলায় ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯ টন চাল। আর এরপরই পটুয়াখালীতে হয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭ টন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ বলেন, 'আমরা যদি লক্ষ্যমাত্রা করতে পারি, সেটাকে বাজারজাতকরণ এবং বাজার মনিটরিং করতে পারলে কনজিউমাররা রিজেনেবল দামে কিনতে পারবে। এবং কৃষকরাও ভালো দাম পাবে।'

বরিশাল অঞ্চলের নদী, খাল কিংবা নালার গভীরতা আগের মতো নেই। কোথাও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে অথবা কৃত্রিম উপায়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি কাজও। এ অবস্থায় খাল কাটার ব্যাপারে ডিও লেটার দিলে খনন করা হবে বলে জানান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।

তিনি বলেন, 'আমাদের প্রকৌশলীদের কাছে ডিমান্ডটা দিলেই, তারা এটা আমাদের জানালেই এই খালগুলো প্রকল্পের আওতায় চলে আসবে।''

বরিশাল অঞ্চলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৩৭৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর আমনের চারা রোপণ করা হবে ৭ লাখ ২ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে। গত বছর আমন উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৫৮৩ টন।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর