বিশ্ব অর্থনীতি
অর্থনীতি
সৌদির জিডিপির ৫০ ভাগ আয় তেলবহির্ভূত খাতে
সৌদি আরবের অর্থনীতি এখন কেবল তেলনির্ভর নয়। দেশটির জিডিপির এবার ৫০ শতাংশ আয় এসেছে তেলবহির্ভূত খাত থেকে। সৌদি তেলের অর্থনীতিকে টেক্কা দিচ্ছে শিল্প, পর্যটন ও পরিবহনসহ অন্যান্য বেসরকারি খাত। কার্বনহীন জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব। তাই অন্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে সৌদি আরব।

জ্বালানি তেলের জোরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাপট দেখিয়ে আসছে সৌদি আরব। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশটি গত এক বছরে তেল রপ্তানি করে মুনাফা করেছে ১৬ হাজার কোটি ডলার। তেলের বিস্ময়কর মুনাফার পরও অন্য খাতের দিকে ঝুঁকছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। বিশ্ব এখন কার্বনহীন জ্বালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই তেল ছাড়া অন্য খাত থেকে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি সরকার।

তেল নির্ভরতা থেকে মুক্তি ও অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে 'ভিশন ২০৩০' গ্রহণ করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্কারের পাশাপাশি উন্নয়নের বেশকিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে তার সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদির নতুন অর্থনীতি গড়ার রূপকল্প ৬ বছর আগেই সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে। যা অনেকটা ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে দেশটির অর্থনীতিতে।

২০২৩ সালে দেশটির মোট জিডিপির ৫০ শতাংশ আয় এসেছে তেল বহির্ভূত খাত থেকে। যা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি ডলার। গত দুই বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। সৌদির তেলনির্ভর অর্থনীতিকে টেক্কা দিচ্ছে শিল্প, পর্যটন, বিনোদন খাতসহ পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। সবচেয়ে বড় অর্জন এসেছে পর্যটন খাতে।

৩ বছর আগে বিশাল কর্মযজ্ঞের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সৌদি সরকার। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য 'নিওম'। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে তোলা হচ্ছে দ্য লাইন নামে অত্যাধুনিক মেগাসিটি। যার খরচ ধরা হয়েছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। মরুর বুকে কাচের তৈরি সব কাঠামো। যেখানে চলবে না গাড়ি, জ্বালানি আসবে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। শহরে বাস করবে ৯০ লাখ মানুষ, যেকোনো সেবার জন্য হাঁটতে হবে মাত্র পাঁচ মিনিট।

তেল-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নির্মাণে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যার আওতায় আছে আরও ২০টির বেশি প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোহিত সাগরের তীরে অবকাশযাপন কেন্দ্র স্থাপন, শিল্পকলা ও বিনোদনের রাজধানী কিদিয়া শহর গড়ে তোলা। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের অর্থায়ন আসছে সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে। বিরাট আকারের মুনাফা অর্জনে বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের পেছনে অর্থায়ন করছে সৌদি আরব।

রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর একটি অংশ বেসরকারিকরণের মধ্যদিয়ে জনগণের কাজের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের নিজ নামে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়ায় পর বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহারে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজ করছে সৌদি। আরব উপসাগরীয় অঞ্চলকে বহুমুখী করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, এই অঞ্চলে আগামী দুই বছরে ৩.৭ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে।

এমএসআরএস