পরিষেবা
অর্থনীতি

৫৩টি বাজেটেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব সড়ক ও সেতু বিভাগের, বঞ্চিত নৌপথ

স্বাধীনতার পর প্রত্যেক বাজেটেই গুরুত্ব পেয়ে আসছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয় সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগকে। বিপরীতে গত ৫ দশক ধরেই তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত রেল, নৌপরিবহন ও আকাশ পথ। যদিও সাম্প্রতিক বাজেটগুলোতে রেলপথে বাজেট বাড়ানো হলেও বাড়ছে না নৌ পথে। এর ধারাবাহিকতা থাকছে, আসছে বাজেটেও। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে নৌপথ নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করা উচিত। বাজেটে সবগুলো পরিবহন খাতে সম্বন্বিত বরাদ্দ না রাখা হলে উন্নত দেশে পৌঁছাতে বেগ পেতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটছে গাড়ি। প্রশস্ত রাস্তা আর একটু পর পর উড়াল সড়ক। যা দিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বাঁধাহীনভাবে ছুটছে পণ্যবাহী থেকে শুরু করে যাত্রী পরিবহন।

গত ১ যুগে দেশের মহাসড়কে উন্নত বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থার সব ছোঁয়াই লেগেছে। তাই বেড়েছে গতিও। মূলত স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া ৫৩টি বাজেটেই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের মধ্যে সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগ।

তবে ঠিক বিপরীত চিত্র যোগাযোগ খাতের সবচেয়ে কম খরচ হিসেবে পরিচিত নৌপরিবহনে। বাজেটে কম গুরুত্ব পাওয়ায় যেখানে গতি তো বাড়েইনি বরং পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীবাহী নৌপরিবহন খাত অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু নৌ রুটও।

আর নৌ এর চেয়ে তুলনামূলক রেলপথে বাজেটে বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও এ পথে তুলনামূলকভাবে গতি বাড়েনি। ধারাবাহিকভাবে চলা দুর্নীতি ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রেল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ এ যেখানে সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগে ৪৮ হাজার ৭শ’ ৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল সেখানে নৌপরিবহনে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১০ হাজার ৮শ' ১ কোটি টাকা আর রেল পথে ছিল ১৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান পরিবহনে ছিল ৬ হাজার ৫শ' ৯৬ কোটি। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের মোট বরাদ্দের ৫৫.৫ শতাংশই বরাদ্দ ছিল সড়ক মহাসড়ক ও সেতু বিভাগে।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সম্ভাব্য বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এবারও সড়ক মহাসড়ক ও সেতু বিভাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বিভাগে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৯ হাজার ১১০ কোটি টাকা। যা যোগাযোগ খাতের মোট বাজেটের প্রায় ৫৫ শতাংশ। গত অর্থ বছরের চেয়ে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য বরাদ্দ হচ্ছে ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। যা যোগাযোগ খাতের মোট বরাদ্দের ১৯ শতাংশ। আর নৌপরিবহনে আগের মতোই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে মাত্র ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া যোগাযোগ খাতে এবারও সবচেয়ে বঞ্চিত থাকছে আকাশ পথ। টাকার হিসাব বলছে, বিমান মন্ত্রণালয় এবারের বাজেটে বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে মাত্র ৫ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের চেয়ে নৌ পথে পণ্য পরিবহনে খরচ হয় মাত্র ৪ ভাগের এক ভাগ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, 'পদ্মা ব্রিজ হওয়ার পরে নৌ পথের যে ধ্বস নেমেছে তাতে উল্লেসিত হওয়ার কিছু নেই। বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট করতে গিয়ে আমি যেমন টেকসই উন্নয়ন করতে পারছি না। বরঞ্চ আমরা টেকসই পরিবেশের মাধ্যমটা আমরা নষ্ট করে ফেলছি।'

যদিও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলছেন, যোগাযোগ ও পরিবহন খাতের বাজেট নিয়ে সরকারের মূল উদ্দেশ্যই হলো পণ্য পরিবহন সহজ ও খরচ কমিয়ে আনা। তাই আগামী অর্থ বছরে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে সমন্বিত বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'লজিষ্টিক মানে শুধু সড়কপথ, নৌ পথ না। এইটা সামগ্রিক একটা ব্যবস্থা। সবক্ষেত্রে আমাদের মূল্য লক্ষ্য ব্যবস্যাকে সহজীকরণ করা, পণ্য দ্রুত পরিবহন করা, সেবার মান উন্নত করা। এই সবগুলো নিয়ে আমরা লজিষ্টিক পলিসি তৈরি করছি।'

আসছে বাজেটে মেগা প্রকল্পের আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একাধিক সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগের প্রকল্প ও একটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থাকলেও স্থান পায়নি নৌ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকল্প।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর