দেশে এখন
0

মশা নিধনে জনবল সংকটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

গরমের তীব্রতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে কিউলেক্স মশার প্রজনন। আবার একটু বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে জন্মায় এডিস। এমন শাঁখের করাতে পড়ে যখন নাজেহাল নগরবাসী, তখন মশা নিধনে জনবল সংকটে ভুগছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

আতঙ্কের এক পতঙ্গ মশা। মশারি, কয়েল, মশা মারার ইলেকট্রনিক্স পণ্য, কোনকিছুই থামাতে পারছে না মশার দাপট। এর থেকে বাঁচতে পরিবার বা ব্যক্তিপর্যায়ে নানা উদ্যোগ, এমনকি সিটি করপোরেশনের মেয়রেরও অসহায় সমর্পন।

চট্টগ্রামে গেলবছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৪ হাজার ৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। মারা যান ১০৭ জন, যার বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। ডেঙ্গু মৌসুম না হয়েও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৩ জন, মারা গেছেন ৩ জন।

নগরীর মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এ সময় কী করছে তারা? নগরবাসীর অভিযোগ হাঁকডাক থাকলেও, ঠিকমতো ছিটানো হয় না কীটনাশক। আছে জনবল সংকট। পাশাপাশি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

স্থানীয় একজন বলেন, 'এদানিং মশা এতোবেশি বেড়েছে যে কোনো কিছুতে মনোসংযোগ করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশনের কাজে তাদের কোনো উদ্যোগ দেখছি না।'

গেলবছর নানা সমালোচনার মুখে ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সিটি করপোরেশন। মশার উৎপত্তিস্থল ও ধরণ শনাক্তে গবেষণাও চালানো হয়। করপোশনের দাবি, আগের ওষুধে কাজ না হওয়ায় এবার নতুন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কার্যকারিতা পরীক্ষায় স্থাপন করা হয়েছে গবেষণাগার। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের ঘাটতির কথার স্বীকার করছেন করপোরেশনের কর্তারা।

চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশন নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম মাহি বলেন, 'মাঝখানে আমাদের কিছু ওষুধের স্বল্পতা ছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলাম সেজন্য। তার প্রভার পড়েছে নগরের ওপর। মশার উপদ্রবটা কিছুটা বেড়েছে। স্বস্তির খবর হচ্ছে আমরা এখন যে ওষুধ ব্যবহার করছি তা ভালো কাজ করছে।'

প্রশ্ন হচ্ছে, মশা বাড়ার ক্ষেত্রে শুধুই কী করপোরেশন দায়ী? বিশেষ করে এডিসের মূল জন্মস্থান জমে থাকা সচ্ছ পানি। করপোরেশন বলছে, খোলা জায়গায় তারা ওষুধ ছিটালেও, ঘরের ভেতর গাছের টব, ছাদ কিংবা নির্মানাধীন ভবন নিয়ে নগরবাসী এখনও অসচেতন।

চসিকের প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী বলেন, 'মশার যে প্রজনন ক্ষেত্রগুলো জমে থাকা পানি হওয়ার কারণে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জায়গায় মশা জমেছে। তবুও আমরা লার্ভা মারার জন্য যে ওষুধগুলো ব্যবহার করি এগুলো দেওয়ার ফলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।'

তবে গবেষকদের মতে, সিটি করপোরেশনের ভূমিকা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এইচ এম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, 'সিটি করপোরেশন যে চারটা রাসায়নিক ব্যবহার করে, সেগুলোর কার্যকারিতা আমরা কিন্তু তেমন বেশি পাইনি।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশা নিধনে স্থানীয় সরকার, জনপ্রতিনিধি ও নগরবাসীকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। খোলা জায়গায় সরকারি সংস্থা ব্যবস্থা নিলে, বাসা বাড়িতে ব্যবস্থা নিতে হবে নগরবাসীকেই।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর