গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার ৭৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়ে খাদ্য, পানি, ওষুধের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানায়, সেখানকার প্রায় ১২ লাখ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার দরকার। গত চার মাসে ১৭ হাজার শিশু পরিবার ছাড়া হয়েছে। এমন ভায়বহ পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ হয়ে আছে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। সামরিক সহায়তার পাশাপাশি দেশটির পক্ষে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশ। ইসরাইলের হামলার বৈধতার পক্ষে নিয়মিত ওকালতি করেছে মার্কিন প্রশাসন। তবে তাতে সায় নেই পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক সাধারণ মানুষের। ইসরাইলের অমানবিক হামলার বিপক্ষেই জোরালো অবস্থান তাদের।
সাধারণের সেই দাবির পক্ষেই এবার দাঁড়ালেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৮০০ এরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা। চলমান যুদ্ধ নিয়ে নিজ নিজ দেশের সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে দেয়া বিবৃতিতে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ ১১টি ইউরোপীয় দেশের সরকারি কর্মকর্তারা। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং গাজাবাসীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ তোলেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, শতাব্দীর সবচেয়ে বাজে মানবিক বিপর্যয়ের সহযোগী হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে তাদের সরকার। তারা যুদ্ধের বাস্তবতা বিবেচনায় নিচ্ছে না। এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতামতেরও প্রয়োজন মনে করেনি। বিবৃতিটিকে ইসরাইলি মিত্র দেশের সরকারের মধ্যে ভিন্নমতের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, যারা গাজা ও ইসরাইল অংশে কাজ করেন এবং সেখানকার গতিপ্রকৃতি ও ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা আছে তাদের কথাও শোনা হয়নি। যুদ্ধপরিস্থিতি প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো সক্রিয়ভাবে দুষ্কর্মে জড়িয়েছে তাদের সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব ছিল। কিন্তু পশ্চিমা দেশের অনেক সরকার সে পথে হাঁটেনি। এখন ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সেখানেও সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে অনেক সরকার।
দেশগুলোর সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ এমনকি জাতিগত নিধন কিংবা গণহত্যার সামিল হওয়ার ঝুঁকি আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ইসরাইলের প্রতি সামরিক, রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সমর্থন হামাসের হাতে জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাজ্য বলেছে তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধের অবসান চায়। বিবৃতিটি আমলে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন। লন্ডনের ইসরাইলি দূতাবাস বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইসরাইলের হামলাকে জনসাধারণের কাছে বৈধ করে তুলতে তাদের সরকারের ভুয়া তথ্য ও খোড়া যুক্তি দেয়া বন্ধের আহ্বান জানান সরকারি কর্মকর্তারা।