পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন

১৭ বছরে আঘাত হেনেছে ১৬টি ঘূর্ণিঝড়

গেল ১৭ বছরে প্রায় ১৬টি ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের মৃত্যু কিংবা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হলেও সিডর, ১৯৯১ কিংবা তারও আগে এ সক্ষমতা ছিল নগণ্য। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও পূর্ণ সক্ষমতার ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তাই ঘূর্ণিঝড়ে ধরনের সাথে ব্যবস্থপনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন জরুরি। এ জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ পুরো ব্যবস্থাপনকে বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

১৯৭০ সালে ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায় প্রায় ৫ লাখ মানুষ। আর ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৮ হাজার।

এরপর বেশকিছু দুর্যোগ এলেও ২০০৭ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)। সে বছরই প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা যায় ১০ হাজার মানুষ। আর দেড় দশক আগে ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে অতিক্রম করলেও দেশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দিনের বেলায় আঘাত হানা আইলায় প্রাণ গিয়েছিল দেড়শ'র মতো।

২০০৭ সাল থেকে প্রায় ১৬টি ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেলেও সিডর, ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড় বা তারও আগে এই সক্ষমতা ছিল সামান্য। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, সতর্কতা জারি ও দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিলেই কি দায়িত্ব শেষ? এটিই কি দূর্যোগ মোকাবিলার পূর্ণ সক্ষমতা?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নাঈম ওয়ারা বলেন, 'আমরা যদি বলি যে মোংলায় এত নম্বর বিপদ সংকেত চলছে, তাহলে কিন্তু এর থেকে একটু দূরের মানুষ সেটা বুঝতে পারবে না। মানুষ যেন তার আশেপাশের পরিস্থিতি বুঝতে পারে, সিগনালটা সেভাবে হতে হবে।'

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৬০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এ তালিকার সর্বশেষ নাম 'রিমাল'। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃতির এ ঘূর্ণিঝড়টি ১১১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনে তাণ্ডব চালায় প্রায় ৫ ঘণ্টা। সিডর, আইলা, ফনি, মখা কিংবা রিমালের মতো দুর্যোগ দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে দুর্যোগের ধরণ ও তীব্রতা। কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কি যুগোপযোগী হচ্ছে? তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ ঘূর্ণিঝড় ব্যবস্থাপনকে বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

গওহার নাঈম বলেন, 'আমাদের খুব কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা। সবাই ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকে। ঢাকা বললে তারপর কাজ করে। স্থানীয়ভাবে এ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে। এটাকে বিকেন্দ্রীকরণের একটা জরুরি দরকার আছে।'

১৯৭০ ও ১৯৯১ এর প্রলঙ্কারী ঘূণিঝড়ের পর সবার চোখে ভাসে একবিংশ শতাব্দীর প্রলঙ্কারী সিডরের কথা। তবে তার আগে যত দুর্যোগ, তাতে পূর্বাভাসের যত দুর্বলতা ছিল তার চেয়েও বেশি ছিল প্রাণহানি কিংবা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত যতটা উন্নয়ন হয়েছে সেই সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী সতর্কতাও সঠিক নির্দেশনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।


এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর