বিদেশে এখন
0

গাজায় গণহত্যার এক বছর: দেশে দেশে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ

ফারজানা শিলা

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার এক বছর পূর্তিতে দেশে দেশে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ। নিউইয়র্কে ফিলিস্তিনের বিশাল পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি। এসময় মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন তারা। তিউনিশিয়া আর তুরস্কে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় নিরাপত্তা কর্মীদের। ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

এ যেন নিউইয়র্কের বুকে এক টুকরো ফিলিস্তিন। রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও ভূ-খন্ডটির বিশাল পতাকা নিয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের এক বছরে উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষ।

বিক্ষোভ হয় ওয়াশিংটন পার্ক, ইউনিয়ন স্কয়ার আর টাইমস স্কয়ারেও। মার্কিনদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অংশ নেন আরব আমেরিকানরাও। ইসরাইলি নৃশংসতার কারণে ইহুদি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করার কথাও জানান তারা।

নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষের মধ্যে একজন জানান, ইসরাইলি হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। সবাই জানি, কেউ একজন গণহত্যা চালাচ্ছে, আমাদেরই পরিচিত কারো প্রাণ যাচ্ছে। অনেকে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মদদ দিচ্ছে।

আরও একজন জানান, সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, বাচ্চাদের প্রাণ যাচ্ছে। বিশ্বকে একটা কথা বলতে চাই, এই গণহত্যা বন্ধ করুন। জাতিসংঘে এত বৈঠক হচ্ছে, গণহত্যা তো বন্ধ হচ্ছে না, কেন সাধারণ মানুষকে মরতে হচ্ছে?

বিক্ষোভে অংশ নেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এসময় তারা ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জোরালো দাবি জানান। মিশিগানে মোমবাতি প্রজ্বলন করে গাজায় হতাহতদের স্মরণ করেন আরব আমেরিকানরা।

আরব আমেরিকানরা বলেন, 'একসঙ্গে ফিলিস্তিনের এতো পতাকা আগে কখনো দেখেননি তারা।'

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের ভূমিকা নিয়ে বিরক্ত। কেউ গণহত্যা বন্ধ করতে কিছু করছে না। উল্টো গণহত্যা চালাতে ইসরাইলকে কোটি কোটি ডলার দেয়া হচ্ছে।'

গণহত্যা চালাবে এমন কোন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবো না আমরা। কোনো উপায় না থাকলে ভোটই দেবো না। এমন কাউকে নিজ হাতে জিততে সাহায্য করবো না, যে ইসরাইলকে অস্ত্র দেবে আর মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়াবে বলেও জানান আরো একজন।

গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কানাডার সাধারণ মানুষ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে কানাডা সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় কড়া সমালোচনা করেন তারা। বলেন, গাজায় এক বছর ধরে গণহত্যা চললেও দখলদারিত্ব চলছে ৭৬ বছর ধরে।

কানাডাবাসীর মধ্যে একজন জানান, এই গণহত্যার দায় কানাডারও আছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক নিষেধাজ্ঞা না দিলে বিক্ষোভ চলবে।

গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে জর্ডানে। তিউনিশিয়া আর তুরস্কে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পাকিস্তানের লাহোরে ইসরাইলের বিরোধিতা করে বিশাল র‌্যালি বের করেছে একটি রাজনৈতিক দল।

পাকিস্তানে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন জানান, সব ইসলামিক দেশকে বলতে চাই, আপনারা ফিলিস্তিনে সেনা পাঠান। তাহলে গাজার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে, ইসরাইল আর আমেরিকাকেও শিক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।

গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিক্ষোভ হয়েছে জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে। গেলো ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলি সেনা অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। গাজা ছাপিয়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে লেবাননেও।

এফএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর