পরিষেবা
অর্থনীতি
0

সিলেটে গৃহকর কয়েকশগুন বৃদ্ধির অভিযোগ

সিলেট সিটি করপোরেশনের গৃহকর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়ে নগর জুড়েই হইচই শুরু হয়েছে। নতুন সমীক্ষায় নগরবাসীর কারো একশ আবার কারো কয়েকশগুন বৃদ্ধি পেয়েছে গৃহকর। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, সিটি করপোরেশনের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত নগরবাসীর উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। যদিও সিটি কর্পোরেশন বলছে, নাগরিক সেবার বিপরীতে গৃহকর ভেবে চিন্তেই দেয়া হয়েছে।

সিলেট নগরীর ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেহেদি হাসান। পাঠানটুলা এলাকার ৬ কক্ষের টিনশেডের একটি কলোনি আছে তার। যেখান থেকে ভাড়া আসে মাসে ২৬ হাজার টাকা। যার মধ্যে অন্তত ১৫ হাজারই ব্যয় করতে হয় গ্যাস-পানি-বিদ্যুতসহ নানা পরিষেবায়। বছরে তিনি গৃহকর দেন ৭২০ টাকা । কিন্তু এবার তার গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ১শ' ৪৮ টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ১২৭ গুন বেশি।

তিনি বলেন,  'আগে দিতাম ৭২০ টাকা। এখন আসছে ৯১ হাজার ১শ’ ৪৮ টাকা। মানুষের জুলুম করার একটা সিস্টেম থাকে তো।'

গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সবার বক্তব্য প্রায় একই রকম। নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবন মালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

আরেকজন বাসিন্দা বলেন, '৩০০ টাকার জায়গায় এখন ৭ হাজার ২শ' টাকা হয়েছে। এখন এই ট্যাক্সে মনে হচ্ছে বাড়ি ঘরের মালিক আমরা না। সিটি করপোরেশন মিলিক আমি ভাড়া দিয়ে থাকতেছি। আমরা ট্যাক্সও দিতাম আবার সুযোগ সুবিধা পাবো না  এইটা তো হতে পারে না।'

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত নগরবাসীর উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। সিটি করপোরেশনকে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ তাদের।

সিলেটের নাগরিকবৃন্দ সংগঠক আবু জাফর বলেন, 'এই ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে বাড়ি ও দোকান মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিবে। সেই হিসেবে এইটা সব নাগরিকের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।'

সিলেট আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শাহিন বলেন, 'কর বৃদ্ধির একটা নিদিষ্ট হার থাকে। কিন্তু শতকরা হারে কর বৃদ্ধি না করে এক লাফে ইচ্ছা মতো কর বৃদ্ধি করা একটা অপরিকল্পনীয় বিষয়।'

আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট পাঁচ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য আট টাকা করে গৃহকর নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভবনগুলোর আয়তন ও ধরন অনুযায়ী নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়। তবে এবারই নতুন হারে কর নেয়া হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'কিছু কিছু মানুষের ট্যাক্স বেড়ে গিয়েছে বেশি। যাদের বেশি হয়েছে তারা কিন্তু ১ মাসের মধ্যে আপিল করতে পারেন। আপিল করলে আমাদের বোর্ড তদন্ত করে ঠিক করবে।'

২০১৯ সালের জরিপে সিলেট নগরে ২৭টি ওয়ার্ডে মোট হোল্ডিং রয়েছে ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এর বিপরীতে নতুন হারে গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ কোটি টাকার বেশি। এরমধ্যে নতুন সংযোজন হয়েছে আরও ২০ হাজার ৬৩০টি হোল্ডিং যা থেকে আরও গৃহকর আসবে সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেশি।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর