নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল থেকে পানি নেমে যাওয়ার যে পথ তাতে অবৈধ সুঁতিজাল দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এতে ঠিকমতো পানি না নামতে পারায় বিলে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে জেলার কৃ্ষক।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকার কৃষক তরুণ কুমার। পানি জমতে থাকায় হালতিবিলে ফসল ফলাতে পারছেন না তিনি। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে চলনবিল এবং হালতিবিল থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। এরপর সেসব জমিতে সরিষা, ভুট্টা, রসুনসহ অন্যান্য ফসল রোপণ করেন কৃষক। কিন্তু এবার অক্টোবর, নভেম্বর পেরিয়ে ডিসেম্বর এলেও বিল পানিতে থৈ থৈ।
হালতিবিলের এই পানিই যেন কৃষকদের মনে বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা। দিন যত ঘনিয়ে আসছে,ততই মনে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। কখন নামবে পানি, কখন রোপন করবেন বোরো ধান, এই পানির কারণে তৈরি হচ্ছে না বীজতলাও। সময়ের মধ্যে বোরো বীজতলা ও ধান রোপন করতে না পারলে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে কৃষকের কষ্টের ফসল। তাই কৃষক পরিবারে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
জলাবদ্ধতার এই পানি কৃষকদের ভোগান্তির পাশাপাশি শঙ্কা তৈরি করছে আগামী তিন থেকে চার মাস পর বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়েও। তবে বন্যার পানি নিষ্কাশনের জন্য বেশকিছু নদী ও খাল থাকলেও অবৈধ সুঁতিজাল ও বানা দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করছে প্রভাবশালীরা।
কৃষকরা জানান, শুধুমাত্র সুঁতিজালের কারণে পানি নামছে না। পানি নিমে গেলে আমরা এখানে গম, শস্য চাষ করতে পারতাম। কয়েক বছর ধরে চলনবিল এবং হালতিবিলে অসময়ের বন্যায় ফসলের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক।
শুধুমাত্র চলতি বছর দেরিতে পানি নিষ্কাশনের কারণে এই দুই বিলের ৬৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে না সরিষা। এ কারণে কৃষকের ক্ষতি অন্তত ৮ কোটি টাকা।
চলনবিল জীববৈচিত্র রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই বিলে অপরিকল্পিত স্লুইসগেট রয়েছে। তাই পানিটা অনেক পরে নামছে। সেই জন্য কৃষকরা শস্য ফলাতে পারছে না।’
স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিলের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ।
চলনবিল ও হালতিবিলে রয়েছে অন্তত ৩৫ হাজার হেক্টর জমি, যেখান থেকে বছরে ধান, সরিষা, ভুট্টাসহ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়।