যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থান থেকে একটু একটু করেই অগ্রসর হচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা করেছে কিয়েভ। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুপিয়ান্সক, দোনেৎস্ক আর আভদিভকার সম্মুখে সেনা সক্ষমতা বাড়িয়েছে দেশটি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, রুশ সেনারা যেন ইউরোপে প্রবেশ করতে না পারে, সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। আরও আকাশ প্রতিরক্ষা সামগ্রী দিতে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কিয়েভ।
এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপের অস্ত্র আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ইউক্রেন।
কিন্তু এরপরও রাশিয়ার সঙ্গে কোনোভাবে পেরে উঠছে না দেশটি। সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বলছে, রাশিয়া এখন নতুন নতুন অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু করেছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সীমানা ভাঙতে শক্তিশালী নতুন এক ধরনের বোমার ব্যবহার শুরু করেছে মস্কো। ইউক্রেনে হামলার উদ্দেশে সোভিয়েত যুগের এই অস্ত্রকে গ্লাইডিং বোমায় রূপান্তর করেছে দেশটি। দেড় টনের 'ফ্যাব ওয়ান ফাইভ জিরো জিরো' বোমা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকে পরিপূর্ণ। বোমাটি ফাইটার জেটের সাহায্যে ৬০-৭০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করা হয়।
এ বোমা ১৫ মিটার প্রশস্ত গর্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম। আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা রাশিয়ার এ নতুন বোমা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে তাদের ফ্রন্টলাইনে বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতার বাইরে থেকে এ বোমা দেশটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। সোভিয়েত আমলের ডাম্ব বোমাগুলোর মধ্যে এটি অনেক শক্তিশালী একটি বোমা। বলা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রের সস্তা একটি সংস্করণ। ইউক্রেনের সেনারা জানান, আভদিভকায় ৪৮ ঘন্টায় আড়াইশ' ফ্যাব দিয়ে হামলা করা হয়।
অন্যদিকে স্বল্পমূল্যের ড্রোন দিয়ে পশ্চিমাদের দেয়া আব্রামস ট্যাঙ্কও গুড়িয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। সংবাদ মাধ্যম এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার মাত্র ৫০০ ডলারের ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত করছে পশ্চিমাদের ১ কোটি ডলারের আব্রামস ট্যাঙ্ককে। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমাদের তিনটি আব্রামস ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে রাশিয়া। ঘুল বা প্রেত নামের সস্তা ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনগুলো বহন করে যুদ্ধাস্ত্র।
রুশ সেনাবাহিনীর দাবি, ঘুল ড্রোন এক ধরনের বিশেষ বেতার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা জ্যাম করা খুবই কঠিন। প্লাস্টিক দিয়ে নির্মিত এই ড্রোনের কিছু অংশ থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ব্রাডলি যুদ্ধযান এবং আব্রামস ট্যাংকের চেসিস দিয়ে তৈরি মাইন অপসারণকারী যান ধ্বংস করতেও এই ড্রোন ব্যবহার করেছে রাশিয়া।
জানা যায়, ইউক্রেনে এ পর্যন্ত ৫০টি ব্রাডলি সম্পূর্ণ ধ্বংস বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অবস্থায় পশ্চিমা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার টিকে থাকা কঠিন বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।