এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় টিকটক

ফেসবুক কিংবা এক্স নয়, টিকটককে নির্বাচনি প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রাবোও সুবিয়ান্টো। তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তার কর্মীরা ঘটা করে পোস্ট করছেন একের পর এক প্রচারণার ভিডিও।

কেউ নাচছেন, কেউ গাইছেন, কেউবা নিজের গুণ দেখাচ্ছেন রন্ধন শিল্পে। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে কোন প্রতিযোগিতা চলছে। তবে এমন কর্মকাণ্ডের আসল কারণ ভোটারদের আকর্ষণ করা।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে ভোটার ২০ কোটির বেশি, যার অধিকাংশই তরুণ। গবেষণার তথ্য বলছে, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১১ কোটি তরুণ টিকটক ব্যবহারকারী। তাই তরুণ ভোট ব্যাংক নিজেদের দখলে রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব দেশটির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী প্রাবোও সুবিয়ান্টো।

প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রাবোও'র ম্যানিফেস্টো ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন কর্মীরা। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী'র প্রচারণা তদারকির জন্য নিয়োজিত আছেন সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনার। তাদের কণ্ঠে উঠে আসে নির্বাচনে টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্ব।

কর্মীরা বলেন, 'আমাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর অঙ্গীকারগুলো প্রচারে অফলাইনের চেয়ে অনলাইন বেশি সহায়তা করছে। একসাথে এত কিছু অফলাইনে করা অনেক জটিল বিষয়। টিকটকে জনগণের ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।'

সুবিয়ান্টো'র এই জিময় ডান্স স্টেপ জনপ্রিয় হয়েছে টিকটকে

নির্বাচনী প্রচারণায় ভাইরাল হয়েছে সুবিয়ান্টোর জিময় বা কিউট ডান্স স্টেপ। তাই কর্মীরাও রিক্রিয়েট করছেন একই নাচ। সুবিয়ান্টোর দল জেরিন্ডা নাচের মাধ্যমে রাজনীতিতে শুভ বার্তা ছড়িয়ে দিতে চায়, তাই এই ধারার নামকরণ করা হয়েছে হ্যাপি চেরি পলিটিক্স।

নির্বাচন প্রচারণাকারীরা আরও বলেন, 'আমাদের নেতা প্রাবোও সুবিয়ান্টো জনসম্মুখে প্রথম যেদিন "জিময়" নাচ শুরু করেন, তখনই জনগণ একে পছন্দ করতে শুরু করে। মানুষের ভালোবাসার জন্য হ্যাপি চেরি মডেল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।'

তবে শুধুমাত্র তরুণদের আকৃষ্ট করতেই এমন নাচের প্রবর্তন করেননি প্রবোও সুবিয়ান্টো। সত্তরের দশকে দেশের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযানের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর দখল করে ইন্দোনেশিয়া। এই অভিযানে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুবিয়ান্টোর ভূমিকা বিতর্কিত ছিলো। এমনকি নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্রপন্থী ২০ জনের বেশি কর্মীকে অপহরণের ঘটনায় তার নাম জড়িয়েছে। যাদের অনেককে আজও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৯৮ সালে সুবিয়ান্টোকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হবার আগে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতি বিশ্লেষককের মতে, তরুণদের কাছে ইমেজ ক্লিন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন এই নেতা। এতে প্রোপাগান্ডা তৈরির হাতিয়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে টিকটক।

টিকটকে নির্বাচনী প্রচারণা করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন প্রাবোও

ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সাইন্স বিভাগের শিক্ষক এন্ডাহ ত্রিস্তুতি বলেন, 'তরুণদের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকার সুযোগ নিচ্ছেন প্রাবোও। টিকটকে ন্যারেটিভ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন ইতিহাস নেই। তাই তাকে কখনো বিচারের কাঠগড়ায় নেয়া হয়নি। মূলত এর মাধ্যমে নিজের ইমেজকে রি-ব্র্যান্ডিং করছেন তিনি।'

জরিপ সংস্থা ইন্ডিকেটর পলিটিকের তথ্য বলছে, নির্বাচনের আগে প্রচারণার এই সময়টায় টেলিভিশনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিলো টিকটক। তাই অনেকাংশেই সফল হয়েছে প্রবোও সুবিয়ান্টোর প্রপোগান্ডা। তরুণদের মধ্যে বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা।

তরুণরা বলেন, 'প্রাবোও'র নামে অনেক মিথ্যা গল্প শোনা যায়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে মানুষ প্রকৃত ইতিহাস জেনেছে। তার গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।'

এর আগে ২ বার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একবারও জয়ের মুখ দেখেননি প্রাবোও সুবিয়ান্টো। টিকটকে ভর করে এবার কি সুবিয়ান্টো পাবেন জয়ের দেখা? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৪ তারিখ পর্যন্ত।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর