দক্ষিণ আমেরিকা
বিদেশে এখন

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ

শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করার অভিযোগে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার মিলেই এর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে নেমেছে দেশটির হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভের ডাক দেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়ন জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার বা সিজিটির ডাকে রাজধানী বুয়েনোস আইরেসের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ১০ হাজার কর্মী ১২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করেন। উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ার মিলেই এর কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সংস্কারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন বিক্ষোভকারীরা।

দেশটির কংগ্রেস ভবন এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এসময় তাদের ব্যানারে লেখা ছিল প্রেসিডেন্ট মিলেই বিশ্বাসঘাতক। অবিলম্বে তার পদত্যাগের দাবি জানায় তারা। শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা।

শ্রমিকরা বলেন, 'আমরা অন্যায্য কোন দাবি করেনি। সরকারকে সহায়তার জন্য আমরা সবসময় রাজি। আমাদের সামাজিক অধিকার হরণ করলে, আমরা প্রতিবাদ করে তা আদায় করবো। সরকারি খাতগুলোকে বেসরকারি মালিকানায় দিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণশিল্পের প্রায় অর্ধেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বেসরকারি খাতে কাজের সুযোগ অনেক কম।'

ধর্মঘটে দেশটির রাজধানীরজুড়ে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। গণপরিবহন ও বিভিন্ন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। ধর্মঘটে ব্যাংক, হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। বুয়েনোস আইরেস থেকে একদিনে প্রায় ৩০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এতে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

মিলেই সরকারের এক মন্ত্রী শ্রমিক ইউনিয়নকে মাফিয়া বলে সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। তার মতে দেশের অর্থনীতিকে টেনে উঠাতে শক থেরাপির বিকল্প নেই।

বিক্ষোভে উত্তাল আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্সিয়াল মুখপাত্র ম্যানুয়েল অ্যাডর্নি বলেন, 'যারা দেশের উন্নতি চায় না তাদের সঙ্গে কোন ধরণের সংলাপে বসা খুব কঠিন। এই ধর্মঘট অযথা, আর্জেন্টিনার আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও জটিল করে তোলবে। আমরা এই মুহূর্তে খুব কঠিন সময় পার করছি। দেশের শান্তির জন্য সরকারের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।'

২০০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি, ৪০% দারিদ্র জনগোষ্ঠী ও বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হ্যাভিয়ার মিলেই ক্ষমতায় আসেন। দায়িত্ব নেয়ার দেড় মাসের মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়ে তার সরকার। তার নেয়া শক থেরাপিতে পরিবহন থেকে ব্যাংক ও শিল্প খাতে ব্যাপকহারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সরকার গঠন করে প্রেসিডেন্ট মিলেই সরকারি শিল্প কারখানাগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া শুরু করেন। এছাড়া শ্রমিকদের ভর্তুকি বাতিল করে সরকারি কর্মচারীদের চুক্তি নবায়নের বিষয়টি আটকে দেয়া হয়। সরকারের উন্নয়নমূলক সব কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সেইসঙ্গে জ্বালানি ও পরিবহনে ভর্তুকি কমানোর ঘোষণা দেন তিনি।

নতুন সরকারের নেয়া অর্থনৈতিক সংস্কারে বিভিন্ন পরিকল্পনা চরম বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এরইমধ্যে ৬০টির বেশি মামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় গণবিক্ষোভ হয়েছে।

চাকরির প্রবিশন পিরিয়ড ৩ থেকে ৮ মাস বাড়ানো, চাকরিচ্যুতের পর ক্ষতিপূরণ কমানো এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটছাটে একটি মামলা ঝুলছে আদালতে। গত মাসে পেসোর মান ৫০ শতাংশ কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি অর্জন করতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর