ধর্মপুর খাদ্যগুদাম হলো কুমিল্লার প্রধান খাদ্য সংরক্ষণাগার। এটি এখন ভাসছে হাঁটু পানিতে। পুরো এলাকাই রূপ নিয়েছে আলকাতরার মত ঘন কালো বিষাক্ত পানির জলাশয়ে আর গুদাম ঘরগুলোর চারপাশ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। শুকনো কিংবা বর্ষা, সারাবছরই থাকে এমন দৃশ্য।
পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায়, বর্ষায় প্লাবিত হয় গুদামের মেঝে। ফলে অধিকাংশ গুদামই এখন পরিত্যক্ত। খাদ্য সংরক্ষণের পরিধি কমে বাড়ছে সংকট। শ্রমিকরা বলছেন, জমাট বাধা দূষিত পানির মধ্যে মালামাল উঠানামায় আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগে।
![](https://images.ekhon.tv/COM FOOD STORAGE 1.webp)
পণ্য গুদাম পর্যন্ত নিয়ে আসতে আসতে পারছে না ট্রাক। ছবি: এখন টিভি
একজন শ্রমিক বলেন, 'এ শহরের যত নোংরা পানি আছে সব এখানে আসে। এখান থেকে আমাদের মধ্যে অনেকেরই ইনফেকশন হয়ে যায়। দূরে থেকে পণ্য আসলেও গাড়ি অর্ধেক পথেই থেকে যায়।'
এদিকে, জলাবদ্ধতা আর স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে নষ্ট হচ্ছে গুদামে সংরক্ষণে থাকা ধান, চাল, গম। অন্যদিকে, পানির নিচে আছে ডুবন্ত গুদাম এলাকার সব সড়ক। ভাঙাচুরা ও গর্তে বিঘ্নিত হচ্ছে খাদ্য পরিবহণ। এমন অচল অবস্থার পরও সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ।
![](https://images.ekhon.tv/COM FOOD STORAGE 2.webp)
পানি ও বর্জ্য জমে বন্ধ হয়ে আছে গুদাম ঘর। ছবি: এখন টিভ
খাদ্য গুদামের পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়নে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। আশপাশের আবাসিক এলাকা ও সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের দূষিত পানি এবং বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছেন, বারবার অবহিত করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না সিটি কর্পোরেশন।
কুমিল্লা ধর্মপুর খাদ্য গুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, 'বাসাবাড়ির সকল নোংরা পানি আমাদের গোডাউনের মধ্যে চলে আসছে। নীচু থাকার কারণে এমন হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে এগুলোর দ্রুত কাজ করা উচিত।'
১৯৬০ সাল থেকে খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার হয়ে আসা এ সংরক্ষণাগারে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে গুদাম রয়েছে ১৪টি। যার ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ১০ হাজার টন। কিন্তু জলাবদ্ধতায় পরিত্যক্ত হয়েছে ৮টি গুদাম। ফলে বর্তমানে ধারণক্ষমতা নেমেছে অর্ধেকে।
![](https://images.ekhon.tv/COM FOOD STORAGE 3.webp)
অল্প পানি জমা একটা গুদামে ট্রাক থেকে পণ্য নামানো হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের পথে হাঁটছেন তারা। সংরক্ষণাগারের উন্নয়নে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে জমা দিয়েছে। আগামী অর্থবছরের শুরুতেই খাদ্য গুদামের উন্নয়নের কাজ হাতে দেয়ার প্রত্যাশা।
কুমিল্লার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, 'এই গুদামগুলোর মেঝে ড্যাম হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা খুলতে পরছি না। আশা করছি আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।'
কুমিল্লার ধর্মপুরের এ খাদ্য সংরক্ষণাগার থেকে রেশন হয় জেলা পুলিশ, বিজিবি, সেনাসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি খাদ্যেরও সরবরাহ হয় এখন থেকে।