দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসনে জিতে একক দল হিসেবে শীর্ষে নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ বা পিএমএল-এন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সমর্থনে তার দল জিতবে বলে জোর গুঞ্জন থাকলেও এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪টি আসন পাওয়া বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির দল পাকিস্তান পিপল'স পার্টি বা পিপিপি'র সঙ্গে জোট সরকার গঠনের আলোচনায় হিমশিম খাচ্ছেন নওয়াজ শরীফ।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, সরকারপ্রধানের পদে ছাড় দিতে দুই দলই নারাজ বলে ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়ালের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করতে হতে পারে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ৭৪ বছর বয়সী নওয়াজকে। পাঁচ বছরের মেয়াদে তিন আর দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির শর্তে জোট সরকার গঠনে আলোচনা কিছুটা এগিয়েছেও।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমির জিয়া বলেন, 'নতুন সরকারে যেই আসুক না কেন, তাদের দু'টি জটিল সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। একটি হলো, পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতি নিশ্চিত করা। কারণ যে ধরনের সংস্কার পাকিস্তানের দরকার, তা রাজনৈতিক স্থিতি ছাড়া সম্ভব নয়। আর দুর্বল একটা জোট সরকারে, যেখানে অনেকগুলো অংশীদার, সবাই যার যার স্বার্থ আদায় করতে চাইবে, সেখানে সরকারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই খুব কঠিন।'
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ভোটের তিন সপ্তাহ, অর্থাৎ আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে। ৩৩৬ আসনের পার্লামেন্টে ২৬৬ আসনে সরাসরি জনতার ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। নারী ও অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত বাকি ৭০ আসন বরাদ্দ হবে পার্লামেন্টে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুপাত অনুযায়ী। এ হিসাবে নওয়াজের দল আরও ২০টির মতো আসন পেলেও হিসাব মিলছে না সরকার গঠনে ন্যূনতম আসনের। নওয়াজ প্রধানমন্ত্রিত্বে শেষ পর্যন্ত ছাড় না দিলে পিটিআইয়ের সঙ্গেও আলোচনার পথ উন্মুক্ত রেখেছে পিপিপি। অন্যদিকে পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাসহ অন্যান্য দল নিয়ে পিএমএল-এনের জোট গঠনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আবার ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরাও খতিয়ে দেখছেন সরকার গঠনের সব উপায়।
এ বিষয়ে আমির জিয়া আরও বলেন, 'ভোটাররা মিশ্র সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ঝুলন্ত পার্লামেন্টই এখন বাস্তবতা। নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় অংশ স্বতন্ত্র ক্যাটাগরির। বেশিরভাগই পিটিআই সমর্থিত। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি। তাই তারা পার্লামেন্টেও একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দাঁড়াতে পারবেন না। এ অবস্থায় হয় তাদের কোনো নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গড়তে হবে, না হয় অন্য কোনো দলে যোগ দিতে হবে।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাতে এখনও দুই সপ্তাহের বেশি সময় থাকলেও ব্যাপক জনসমর্থিত পিটিআইয়ের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। বিলাওয়ালের সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে জোট বাঁধা কঠিন ইমরানপন্থিদের; অন্যদিকে ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধলে সরকার গঠনে ন্যূনতম আসনের হিসাব মেলাতে পারবে না পিটিআইও।