এ শহরে প্রতিদিন ছুটে চলা, কোটি পদযাত্রায়। লাখো যানবাহনে, জীবন আর জীবিকার তাগিদে।
ঋতু বদলায় এখানে, বদলে যায় সরকারও। গ্রীষ্মের পরে শীত এলেও বদল হয় না ভোগান্তির গল্প, প্রতিদিন নিয়ম করে এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় যানজট।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। আর্থিক ক্ষতি দিনপ্রতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর অযথা জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার।
গবেষণা বলছে, প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে থাকে যানবাহন। আর এর কারণ যে, যেখানে সেখানে বাস থামানো আর রিকশার অবাধ চলাচল সেটিও সবার জানা।
কিন্তু এভাবেই কী চলবে? গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে, ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ অবশ্য বিকল্পের কথা বলে যাচ্ছে। কখনো এ রাস্তা বন্ধ করে, কিংবা রাস্তা খুলে দিয়ে। আবার কখনো এক ইউটার্ন বন্ধ, তো অন্য ইউটার্ন খুলে চলেছে নানা পরীক্ষা। শহরের বনানী, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে এই প্রকল্প। কিন্তু তাতে যান চলাচল কতটা নির্বিঘ্ন হচ্ছে?
অবশ্য এতে বিভ্রান্তও হচ্ছেন অনেকেই। পথ নির্দেশিকা না থাকায় কেউ কেউ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন গাড়ি। রাস্তা বন্ধ করায় বরং ভোগান্তি বেড়েছে, এমন অভিযোগও করেন অনেকে।
চারমুখী রাস্তাগুলোকে দ্বিমুখী সড়কে নামিয়ে আনার এ উদ্যোগের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলছেন, এতে যানজট কমবে।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছু সুফল পাচ্ছি এবং এগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ পরিবর্তনগুলোতে যদি ইতিবাচক ফল আসে তাহলে আমরা এগুলো অব্যাহত রাখবো।’
অবশ্য এ নিয়ে এখনই খুব বেশি আশাবাদী নন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও অবকাঠামো পরিবর্তন না হলে যানজটের সমাধান কঠিন হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘পাইলটিং শেষে যেসব মোড়গুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে সেগুলো কন্টিনিউ করা হোক। যেসব জায়গায় ফল ভালো হয়নি সেসব ক্ষেত্রে আগের সিস্টেমে ফেরত যাওয়া উচিত। এখন ঢাকার উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ দরকার। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ঢাকায় যে গাড়ির সংখ্যা সেটাওি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরে, কিছুটা গতি ফেরাতে নতুন পরীক্ষায় ট্রাফিক বিভাগ। যাত্রীরা বলছেন, কিছুটা ঘুরতে হলেও অনেকটাই কমেছে জ্যাম। তবে এই পরীক্ষা সফল হবে নাকি ব্যর্থ? তা বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে।