অর্থনীতি

চা উৎপাদনে রেকর্ড হলেও বিশ্ববাজারে পিছিয়ে

প্রতিবছরই চা উৎপাদনে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ কিন্তু বিশ্ব বাজারে নেই কোন অবস্থান। অথচ রয়েছে পর্যাপ্ত জমি আর প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন সহযোগী নানা সুযোগ সুবিধা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চায়ের গুণমান এবং চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান না করায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। যদিও চা বোর্ড বলছে, গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে চা শিল্পের অতীত ফেরানোর চেষ্টা করছেন তারা।

প্রায় শুরু থেকেই চা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি পানীয়। একইভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও চায়ের উপস্থিতি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাণিজ্যিকী করণে চায়ের প্রস্তুত ও পরিবেশনেও এখন বর্ণিল বৈচিত্র্য।

সেই চা উৎপাদনে বিশ্বের সম্মৃদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম অংশ বাংলাদেশ। ২০১০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের কদর বেশ উল্লেখ করার মতো । কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানান সংকটে পড়ে দেশের চা শিল্প। ধীরে ধীরে হারাতে বসে বৈশ্বিক বাজার।

বিভিন্ন সূচকে চায়ের অবস্থান। ছবি: এখন টিভি

বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশ্বের চা বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ টলমলে। রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও অতীত অর্জনে পড়েছে ভাটা।গত ১ দশকে রপ্তানি কমেছে অন্তত ৭ গুণ।

উৎপাদন চিত্রে নজর দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। এই যেমন, এম এ জামান সোহেল। ৩টি চা বাগানের স্বত্তাধিকারী তিনি। চা উৎপাদন করেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। তবে শেষ ১০ বছরে দেখেননি লাভের মুখ । শ্রমের মজুরি, কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাগান পরিচালনা করতে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকারও উপরে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাকে।

মেক্সন ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক এম এ জামান বলেন, 'দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য বিপুল পরিমাণে ইনভেস্ট করেছি কিন্তু সেই আনুপাতিক হারে লাভবান হইনি। এভাবে চলতে থাকলে এবছর কোনভাবে থাকলেও আগামী বছর আর থাকা সম্ভব হবে না এই ব্যবসায়।'

বিশ্লেষকরা বলছেন সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার না বাড়ানো, উৎপাদনশীলতায় অন্যান্য দেশে থেকে পিছিয়ে পড়া সহ রয়েছে গবেষণামূলক কার্যক্রমের ঘাটতি থাকার কারনে এই দশা চা শিল্পের ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চা প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, 'উৎপাদান বাড়াতে গেলে ভ্যারাইটিজ আনতে হবে। কালচারাল প্যাক্টিস করতে হবে।'

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেন, 'বিশ্বের চাহিদা অনুসারে আমরা সেইরকম ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারছি না।'

২০১০ সালে দেশের এসব চা বাগান গুলো থেকে উৎপাদিত চায়ের প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সুসংহত অবস্থান ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে হঠাৎ করেই সেটি নেমে আসে প্রায় ২ শতাংশে। শেষ ১২ বছর সময়ের ব্যবধানে গড় উৎপাদন ২২.২ শতাংশ বাড়লেও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত না নেয়ার কারনেই আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থা সুসংহত রাখা যায়নি বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

চা বোর্ডের টি সেলস কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্য সৈয়দ এস এম এন ইসলাম মুনির বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হলে চায়ের কোয়ালিটি ও আন্তর্জাতিক রিলেশন ভালো রাখতে হবে।'

তবে বাংলাদেশ চা বোর্ড বলছে , সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা ।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা চালু করেছি। ইউরোপের বাজারে চা রপ্তানি শুরু হয়েছে।'

দেশের অর্থনীতির বাজারে যে সকল পণ্যকে অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে চা হলো অন্যতম একটি। চা যে কেবল দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে তাই নয় বরং কয়েক লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান, আয় ও জীবন জীবিকাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে এই শিল্পটি। তাই চায়ের বাজার শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না বরং যদি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রত্যাশা মতো প্রবেশ করা যায় তাহলে এই চা-ই হতে পারে দেশের অর্থনীতি সম্মৃদ্ধির জন্য অন্যতম এক উপাদান।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর