পরিষেবা
অর্থনীতি
বাড়িভাড়া বাড়ছে, কমছে পুরো বাসা ভাড়া নেয়ার সামর্থ্য
কারও প্রাইভেট চাকরি, আবার কারও ছোট ব্যবসা। বছর পার হলেও আয়ের খাতায় যোগ নেই নতুন অর্থের। অথচ নিয়ম করেই প্রতিবছর বাড়ছে বাড়িভাড়া। বাধ্য হয়ে কেউ ছাড়ছে শহর আবার কেউ খুঁজছেন সাবলেট বা অংশীদারি আবাসন। বিবিএস এর রিপোর্ট বলছে ২ বছরের ব্যবধানে সাবলেট গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দিগুণ।

একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাকিব। অসহায় আত্মসমর্পণ তার। স্বপ্নকে পুঁজি করে ৫ বছর আগে তিনি ঘর বেঁধেছিলেন মিমের সঙ্গে। সংসারের শুরুটা দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে করলেও এখন মিল নেই সাধ আর সাধ্যের। আয়ের সাথে ব্যায়ের মিল রাখতে অন্যের ভাড়া বাসায় হয়েছেন ভাড়াটিয়া।

রাকিব বলেন, 'আমার যে ব্যবসা, এটা থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে একা পুরো বাসা নিয়ে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। বাসা ভাড়া অনেক বেশি। যার কারণে আরেকজনের সাথে শেয়ার করে থাকছি।'

একটি বাসায় দু'টি পরিবার একসাথে থাকা হয় বছর খানেক। রান্নাঘর, বাথরুমও শেয়ার করতে হয় পাশের রুমের মানুষের সাথে। মূল্যস্ফিতির চাপে হাসফাঁস অবস্থা।

সাবলেট নিয়ে বাস করছেন বাকিব-মিম। ছবি: এখন টিভি

রাকিবের স্ত্রী মীম বলেন, 'যেটা কিনতে চাই বা করতে চাচ্ছি সেটা খাওয়া-দাওয়া হোক বা বাসার ক্ষেত্রে হোক, বাড়িভাড়া বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেভাবে খরচ করতে চাচ্ছি সেভাবে হচ্ছে না।'

থমকে আছে আয়। আর প্রতিদিনই বাড়ছে সাধারণ মানুষের খরচ। মানুষের জীবনযাপন ব্যয় যেমন বেড়েছে, মুদ্রস্ফীতির চাপে তেমনি বাড়ছে বাড়িভাড়াও। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়া বাড়িভাড়ার সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেকেই খুঁজছেন সাবলেট। রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে সাবলেটের জন্য বিজ্ঞাপন।

রাজধানীর দেয়াগুলোতে হাজারও বিজ্ঞাপন। বছর বছর বাড়িভাড়ার বৃদ্ধির লাগাম টানার যেন কেউ নেই। বাসা ভাড়া বৃদ্ধি হয় কোন নিয়মে? ভাড়াটিয়ারা বলছে, বাড়ির মালিকের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।

একজন ভাড়াটিয়া বলেন, 'ঠিকমতো পানি না আসা, বাসায় গেস্ট না আসা এগুলো নিয়মিত হয়। বিভিন্ন সময় বাসা পরিবর্তন করে থাকি। আবার পরিস্থিতির কারণে মালিকরা অনেক বেশি ভাড়া নেয় আমাদের থেকে। কোনো বাড়িওয়ালা তো প্রতিবছরই ভাড়া বাড়ায়।'

বিবিএস এর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষ নিজের বা একক ভাড়া বাসায় থাকে, ২০২২ সালে যার সংখ্যা ছিল ৯৬ শতাংশ আর ২০২১ সালের হিসেবে ৯৭.১ শতাংশ।

বছর ঘুরতেই বাড়ছে সাবলেট গ্রহণকারীর সংখ্যা, ২০২৩ সালে ৪.১ শতাংশ সাবলেট গ্রহণ করে দেশের মানুষ যা ২০২২ সালে ছিল ৩.৩ শতাংশ আর ২০২১ সালের হিসেবে ২.৪ শতাংশ।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'আমরা এখন সর্বক্ষণ এডজাস্ট করছি। খাবার, জীবনযাত্রার মান সবকিছুই এডজাস্ট করে চলার চেষ্টা করছি। সেখানেও কুলাতে পারছি না। সাবলেটে দু'পক্ষেরই একটা ডায়নামিক্স আছে এখানে। যারা বৃহত্তর আবাসন নিতে পারছে না, তাদের জন্য এটা এক ধরনের সমাধান। আবার যে সাবলেট দিচ্ছে, তার জন্য এটা বাড়তি আয়ের সুযোগ। এবং এটা বাড়ছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।'

রাজধানীতে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ ভাড়াটিয়া। সাধ্যের বাইরে বাড়িভাড়া, বলছে ভাড়াটিয়া পরিষদ। মুল্যস্ফিতির চাপ সামাল দিতে ২৫ শতাংশ বাড়ি সাবলেট দেওয়ার আহ্বান তাদের।

ভাড়াটিয়া পরিষদের মো. বাহারানে সুলতান বলেন, 'যারা বাড়ি করছে সেখানে যেন ২৫ শতাংশ ভাড়াটিয়াকে সাবলেট দেয়। আমি কোনো মালিকের কাছে মাগনা চাই না। কিন্তু বাড়িভাড়াটা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তাদেরকে ভাড়া দিতে বলছি। এ অবস্থায় এখন ভাড়া অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।'

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের পকেটের অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে সামাজিক বা অংশীদারি আবাসন একটি কৌশল হতে পারে এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

এমএসআরএস