এশিয়া
বিদেশে এখন
0

আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন কেন্দ্র লেবানন, নেই সমাধানের আশা

মধ্যপ্রাচ্যে আরও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

২০ বছরের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে একদিনেই প্রায় ৫শ' মানুষের মৃত্যু দেখলো লেবানন, আহত ১৬শ'র বেশি। এদিন হিজবুল্লাহ'র ১৩শ' স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি ভূখণ্ডে ২শ'র বেশি রকেট ছুঁড়েছে হিজবুল্লাহ। পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে লেবানন, নেই হিজবুল্লাহ-ইসরাইল রাজনৈতিক সমাধানের আশা-বলছেন বিশ্লেষকরা।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর বছর না পেরোতেই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধে অবতীর্ণ ইসরাইল। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে গেলো সপ্তাহেই জোরদার এবং বিস্তৃত পরিসরে বিমান হামলা শুরু করে যুদ্ধবাজ দেশটি।

দুই দশকের ভয়াবহতম সংঘাতের শিকার হয়ে শুধু সোমবার লেবাননে হতাহত দুই হাজারের বেশি মানুষ।

লেবাননের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাজ আল-আবাইদ বলেন, 'দুভার্গ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে হামলার পাশাপাশি বেকা এলাকাতেও হামলা চলছে। ২৭টি হাসপাতালে হাজারের বেশি আহত মানুষ চিকিৎসাধীন। অনেক মানুষের খবর এখনও আমরা জানিই না।'

এদিন হিজবুল্লাহ'র অস্ত্রের গুদাম রয়েছে দাবি করে হাজারের বেশি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলি ভূখণ্ডে ২শ'র বেশি রকেট ছুঁড়েছে হিজবুল্লাহ। এরমধ্যেই যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব।

ইসরাইল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইল আর এক হাজার কেজি যুদ্ধাস্ত্রবাহী ভারি রকেটসহ ১৩শ' লক্ষ্যে আঘাত করেছি আমরা। ইসরাইলি ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার রকেট আর ড্রোনও ধ্বংস করেছি।'

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ত বলেন, 'গত ২০ বছর ধরে হিজবুল্লাহ যে অবকাঠামো দাঁড় করিয়েছে, আপাতত সেগুলো ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য। যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ের প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে যা শিগগিরই শুরু হবে।'

ইসরাইলি হামলার প্রাথমিক লক্ষ্য অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং হাজারো দখলদারকে ফেরত পাঠানো হলেও যুদ্ধে এ পর্যায়ে কোনোটিই খুব শিগগিরই ঘটবে বলে দৃশ্যমান নয়। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে উপত্যকার শাসকদল হামাসকে সহযোগিতার জন্য হিজবুল্লাহকে চড়া মাশুল গুণতে হলেও সমর্থনে ভাটা পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'ইসরাইলের এ যুদ্ধ লেবাননের জনগণ নয়, বরং হিজবুল্লাহ'র সাথে। অনেকদিন ধরে তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে গোষ্ঠীটি। সতর্ক করে বলছি, হিজবুল্লাহ'র কারণে নিজেদের ও প্রিয়জনের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবেন না। আমাদের পথ থেকে সরে দাঁড়ান।'

লেবানন কনসাল্টিং ইন্সটিটিউশন ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের মহাপরিচালক ইমাদ রিজিক বলেন, 'যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধি আরও বাড়বে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলেই ধারণা করছি। কিন্তু শত্রুপক্ষের এসব হামলা লেবাননের দিক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পথে কোনোভাবেই বাধা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। বরং গাজা আর পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।'

আগে থেকেই ৪০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পারস্য উপসাগরে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে যোগ দিতে পারে আরেকটি বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান এবং মার্কিন নৌবাহিনীর দু'টি ডেস্ট্রয়ার ও ক্রুজার। আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রের কেন্দ্র গাজা থেকে সরে গেছে লেবাননে, বলছেন বিশ্লেষকরা। দেখছেন না সমাধানের সম্ভাবনা।

লেভান্ত ইন্সটিটিউট ফর স্ট্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সামি নাদের বলেন, 'রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাবনা ভীষণ সূক্ষ্ম। দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি। অস্ত্রবিরতির কোনো আশা তো দেখা যাচ্ছেই না; বরং এটা এখন স্পষ্ট যে যুদ্ধের কেন্দ্র আর গাজা নেই, বরং এখন প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র লেবানন।'

এদিকে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরের জেনিনসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সহিংস অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলের হামলা অব্যাহত, উপত্যকায় ৩৫৪ দিনের ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪১ হাজার ৪৫৫ জনে, আহত প্রায় ৯৬ হাজার।