দেশে এখন
0

প্রথমবারের মতো পেসমেকার স্থাপন, সফল চিকিৎসকেরা

ময়মনসিংহ

প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো রোগীর শরীরে স্থাপন করা হয়েছে স্থায়ী পেসমেকার। সফলভাবে পেসমেকার স্থাপনের বিষয়টিকে যুগান্তকারী বলছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম পেসসমেকার স্থাপনের পর এখন পুরোপুরি সুস্থ। এতে রোগীর স্বজনদের খরচ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এই সেবাটি চালু হওয়ায় হৃদরোগের জটিল চিকিৎসায় উপকৃত হবেন এই অঞ্চলের জনগণ।

বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খানের শরীরে স্থাপন করা হয় স্থায়ী পেসমেকার। ছবি: এখন টিভি

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ৮৫ বছরের বৃদ্ধ বীরমুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান ২৯ আগস্ট বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে। কমে যায় হৃৎস্পন্দন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুকে পেসমেকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা।

স্বজনদের সম্মতিতে ৩ সেপ্টেম্বর ক্যাথল্যাবে অপারেশনের মাধ্যমে তার শরীরে স্থাপন করা হয় স্থায়ী পেসমেকার। পেসমেকার স্থাপনের পর রোগী এখন পুরোপুরি সুস্থ। এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে পেসমেকার কিনে দেন রোগীর স্বজনরা। আর ওষুধসহ অন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে। নিজের এলাকায় এধরনের জটিল চিকিৎসা সেবা পাওয়ায় অর্থের যেমন সাশ্রয় হয়েছে ,তেমনি পড়তে হয়নি কোনো বিড়ম্বনায়।

রোগী নজরুল ইসলাম খান জানান, পেসমেকার লাগানোর পর এখন আমি আগের থেকে অনেক ভালো। ডাক্তার ও নার্সের সেবা অনেক ভালো পেয়েছি।

রোগীর স্বজনদের মধ্যে একজন জানান, আমাদের তো অনেক ভয় ছিল। প্রথমবারের মত পেসমেকার লাগানো হচ্ছে এখানে কি হয়। কিন্তু এখন দেখতেছি ডাক্তারদের সেবা অনেক ভালো এবং আমাদের রোগী ও সুস্থ।

হৃদরোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিমের এক ঘন্টার জটিল অপারেশনের মাধ্যমে রোগী নজরুল ইসলামের শরীর স্থাপন করে সিঙ্গেল চেম্বার পেসমেকার। প্রয়োজনীয় কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ চালু করা গেলে নিয়মিতই পেসমেকার সংযোজন করা সম্ভব হবে বলেও জানান তারা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগ জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রোগীটা অনেক বয়স্ক প্রায় ৮৫ বছর বয়স। আর এমন কাজ এর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হয়নি। রোগীর সবরকম সেফটি নিয়ে অপারেশনটা করা হয়।'

হৃদরোগ বিভাগ সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, 'যেহেতু প্রথমবারের মত পেসমেকারের কাজটা হয়ছে। আমরা খুবই গর্বিত এবং আমি নিজেও খুব খুশি। আর ভবিষ্যৎতে যাতে এই ধারা অব্যহত থাকে এই ব্যাপারে দেশের সরকার রোগী সাধারণ এবং মিডিয়া আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।'

ময়মনসিংহ মেডিকেলের হৃদরোগ বিভাগে ১শ' শয্যার বিপরীতে নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ৪'শ। ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রোগীর দীর্ঘ সারি। এদের বেশীর ভাগই হৃদযন্ত্রের জটিল রোগে আক্রান্ত। ক্যাথল্যাব ও পেসমেকার স্থাপন যন্ত্রপাতির কিছুটা স্বল্পতা থাকলেও চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় কমতি নেই বলেও জানান হৃদরোগ বিভাগের প্রধান।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগ বিভাগীয় প্রধান . এস এম শরীফ উদ্দিন পাঠান জানান, আমাদের কিছুটা স্বল্পতা আছে সেই স্বল্পতার বিষয়টা আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আর অফিশিয়ালি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি আমরা এই স্বল্পতা কাটিয়ে উঠব এবং ইনশাল্লাহ আমরা এই সেবাটা ময়মনসিংহবাসীকে প্রতিনিয়ত দিতে পারবো।

এদিকে পেসমেকার স্থাপনের মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে উল্লেখ করে হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, 'নির্মিতব্য ১৭ তলা নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে সেখানে অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক সেন্টার হবে। তখন আরো সহজ হবে হৃদরোগের জটিল সব চিকিৎসা।'

২০২০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে ক্যাথল্যাব চালুর এক বছর পর শুরু হয় এনজিওগ্রামসহ অন্যান্য চিকিৎসা কাযর্ক্রম। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ক্যাথল্যাবে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬১৪জন। এরমধ্যে ৫৮৬ জনের এনজিওগ্রাম ও ১০৩ জনের হার্টে রিং পড়ানো হয়েছে।

এফএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর