তথ্য-প্রযুক্তি
0

আর্থিক অনিশ্চয়তায় ডিজিটাল মাধ্যমের আয়ে ঝুঁকছেন তরুণরা

ডিজিটাল মাধ্যমের এই যুগে যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট বানিয়ে অর্থের সন্ধান মিলছে দ্রুত- সেখানে কী ভাবছেন তরুণরা। সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষাজীবন শেষে আর্থিক অনিশ্চয়তাই এই পথে তরুণদের ধাবিত করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঢুঁ দিলেই আগে চোখে পড়তো ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাস কিংবা ছবি। এখন নিউজফিড স্ক্রলিংয়ে যার স্থান দখল করে নিচ্ছে ভিডিও কনটেন্ট। যা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অনেকের কাছে নির্মোহ বিনোদন হলেও মান নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। কিছু কনটেন্ট প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি হলেও বেশিরভাগই ব্যক্তিনির্মিত।

কিন্তু কেন এত কনটেন্টের জোয়ার বইছে ফেসবুক, টিকটক, ইন্সট্রাগ্রামসহ ইউটিউবে? সবটাই কী স্বাভাবিক জীবনযাপনের আনন্দ, উচ্ছ্বাস কিংবা উৎসাহ থেকে করা? তা বলা যাচ্ছে না একেবারেই। কারণ এসব কনটেন্ট থেকে তৈরি হয়েছে ডলারে আয়ের সুযোগ।

এসব কনটেন্ট থেকে গড়ে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আয় করছেন ২০ হাজার থেকে লক্ষ টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সেখানে স্নাতক পাশ করা তরুণ গড়ে ২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি থেকে যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়িক তরুণদের আয়ও এসকল কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে ছাড়াতে পারেনা ।

পড়ালেখা কি তাহলে বাণিজ্য বিনিয়োগের মতো চেহারা ধারণ করেছে। আজকাল দেখা যায় পড়ালেখাকে ব্যর্থ বিনিয়োগ ভাবছেন অনেকে। তবে সেটি মানতে নারাজ এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশকৃত লাবিদ রাহাত বলছেন এই মাধ্যমে সাময়িক অর্থ আসলেও পড়ালেখার জ্ঞানই টিকিয়ে রাখবে একজন নির্মাতাকে।

ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটর লাবিদ রাহাত বলেন, '১৫ থেকে ১৬ বছর কখনোই কনটেন্ট ক্রিয়েশনে থাকা উচিত না। কারণ এটা সাস্টেইনেবল না। আমি চাকরির দিকে যায় তখন টাকার পরিমাণ কম হবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হবে।'

অর্থ, মেধা ও শ্রম দিয়ে ১৮ থেকে ২০ বছর পড়াশোনা করে একজন ব্যক্তি যখন অর্থের নিশ্চয়তা পায় না সেখানে কি করবেন তারা এমন প্রশ্ন করি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। সেখানে মিললো দুই রকম মতই। তবে পড়ালেখাকে অপ্রোয়জনীয় মানতে নারাজ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, 'বাংলাদেশে সবাই গড়ে অর্নাস শেষ করছে কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রত্যাশিত চাকরি পাচ্ছে না।' 

আরেকজন বলেন, 'পড়ার পাশাপাশি কনটেন্ট ক্রিয়েশনটা আলাদা খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।'

সমাজের এমন পরিবর্তনে শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে নিশ্চয়তাহীনতার দায় রয়েছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষার বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি হলেও টেকসই বলে মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, 'ভালো কনটেন্টের থেকে খারাপ কনটেন্টের বেশি ভিউ হচ্ছে যেটা থেকে শেখার কিছু থাকে না এবং সে রাতারাতি বড় অঙ্কের টাকা ইনকাম করে থাকে। ফলে অন্যরা এটা দেখার পরে হতাশায় পড়ে যায়।'

তবে বিশ্লেষকরাও এটিও বলছেন ডিজিটাল মাধ্যমের এই খাতকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের সব ধরনের উপাদান নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে দেশকে। তবে সেখানে সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় সমাজের চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন আনাও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর  

No Article Found!