শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি

শততম সমুদ্রগামী জাহাজ বহরের মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ

শততম সমুদ্রগামী জাহাজ বহরের মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮শ' কোটি ডলারে। এসব জাহাজে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই শুধু নয়, জাহাজ ভাড়া দিয়েও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে এ খাত। বাড়ছে নাবিকদের কর্মসংস্থানও। শিপিং এজেন্টরা বলছেন, আগামীর চাহিদা পূরণে কার্গো জাহাজের পাশাপাশি দেশীয় পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজের সংখ্যাও বাড়ানো দরকার।

ডলার সংকটে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা ভাটা পড়লেও সমুদ্রগামী জাহাজ কেনা থেমে থাকেনি। মূলত, কর ছাড়ের সঙ্গে সরকারি প্রণোদনা এবং দেশি জাহাজে পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ লুফে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের বহর বাড়াচ্ছেন শিল্প মালিকরা।

এক্ষেত্রে শততম সমুদ্রগামী জাহাজের মাইলফলক গড়ে- ইতিহাসের অংশ হতে চলছে নীরব প্রতিযোগীতা। ৬৬ হাজার ৫০০ টন ধারণক্ষমতার লাইবেরিয়ার পতাবাহী এমভি নিউ চ্যাম্প জাহাজটি কিনে দেশি পতাকাবাহী জাহাজ বহরের শতকের ঘরে পৌঁছার গৌরবের অংশীদার হচ্ছে মেঘনা গ্রুপ।

নৌ বাণিজ্য অফিসে জাহাজটির নিবন্ধনও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ জাহাজ হস্তান্তর হবে জুনে। শতকের সাথে মিলিয়ে তখন এর নতুন নাম হবে এমভি মেঘনা সেঞ্চুরি।

মেঘনা গ্রুপের মার্কেন্টাইল শিপিংয়ের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, 'আমাদের আগে একটা জাহাজ রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখলাম ৯৯তম এইটা। পরে নতুন জাহাজ যেটা আসলো সেটার নাম ১০০তম রেজিষ্ট্রেশন হবে বলে এর নাম মেঘনা সেঞ্চুরি রাখা হয়েছে।'

অপর শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম ও জাহান –১ নামে একটি জাহাজ কিনেছে। যেটি হস্তান্তর করা হবে চলতি মে মাসেই। এই জাহাজের নিবন্ধন পরে হলেও হস্তান্তর হবে আগে। তাই দুটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজকে শততম জাহাজের তালিকায় রাখছে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর।

দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের মধ্যে কেএসআরএম ২৫টি, আর মেঘনা গ্রুপ ২৪টি সমুদ্রগামী জাহাজের মালিক। ১০টি জাহাজ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে আকিজ গ্রুপ, ৯টি কনটেইনার জাহাজ নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে এইচআর লাইন আর ৭টি জাহাজ নিয়ে ৫ম অবস্থান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বিএসসির। দেশীয় বহরে এখন এলপিজি, কনটেইনার কিংবা ভোজ্যতেল পরিবহনের জাহাজও যুক্ত হয়েছে।

নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, 'আন্তর্জাতিক জাহাজ ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন শততম জাহাজে উত্তীর্ণ হচ্ছে। শততম জাহাজে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা শিপিং ও এস আর লাইন প্রক্রিয়াধীন আছে।'

মেঘনা গ্রুপের এই কর্মকর্তা জানান, নিজস্ব পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ই শুধু নয় অন্যান্য দেশের পণ্য পরবিহন করে ভালো আয় হচ্ছে। দেশে বুকিং কম থাকলেও ইউরোপ আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে পণ্য পরিবহন করে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

মেঘনা গ্রুপের মার্কেন্টাইল শিপিংয়ের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, 'যেকোনো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষেত্রে ইনভেস্ট করেন সেখানে রিটার্ণ আসতে সময় লাগে। আর জাহাজ শিল্পে যখনই বিনিয়োগ করবেন তখন থেকেই ট্রেডিং শুরু করে দিতে পারবেন। 

নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশীয় পতাকাহাবাহী জাহাজ সুরক্ষা আইন কার্যকর হওয়ায় ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে মেরিন ক্যাডেট ও নাবিকদের চাকরির সুযোগ বাড়ছে। প্রসার হচ্ছে জাহাজ মেরামতসহ সহযোগী খাতের ব্যবসা।

তবে শতাধিক সমুদ্রগামী জাহাজের কনটেইনার জাহাজ মাত্র নয়টি। শিপিং এজেন্টদের অভিযোগ, কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কম থাকার ফলে জাহাজ সুরক্ষা আইনের কিছু ধারা কঠোর প্রয়োগের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আগামীর চাহিদা পূরণে কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো এবং জাহাজ সুরক্ষা আইনের কিছু ধারা সংশোধনের আহ্বান তাদের।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, '৯০টি জাহাজের মধ্যে ৮টি জাহাজ আছে যাদের ৬ থেকে ৯ শতাংশ কার্গো পরিবহনের ক্ষমতাও নেই।'

নৌ বানিজ্য অধিদপ্তর জানায়, পণ্য পরবিহনসহ জাহাজ পরিচালনা করে এ খাত থেকে বর্তমানে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। চলতি বছর সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ১১৫ তে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা প্রতিষ্ঠানটির।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর  

No Article Found!