গেল ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার গঠন নিয়ে এতোদিন চলে দফায় দফায় আলোচনা। অবশেষে ১০ দিন পর মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো নতুন জোট সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী করা হচ্ছে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফকে। তার বাবা আসিফ আলি জারদারিকে করা হতে পারে জোট সরকারের প্রেসিডেন্ট।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেন, 'পাকিস্তান পিপলস পার্টি আর মুসলিম লিগ নওয়াজ, এই দুই দলের পর্যাপ্ত আসন আছে। আমরাই নতুন সরকার গঠন করে কাজ করতে পারবো। আল্লাহ চাইলে নতুন সরকার গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন পিপিপি আর পিএমএল-এন নতুন সরকার গঠন করবে। আল্লাহ চাইলে শাহবাজ শরীফ আবারও আমাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন। পুরো দেশ প্রার্থনা করছি, এই জোট সরকার যেন সফল হয়।'
এই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১৩৪ টি আসনের। এরমধ্যে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে থাকায় স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে তার দল পিটিআই'এর প্রার্থীরা ৯৩ টি আসন পাই যা পর্যাপ্ত ছিলো না, এমনকি তাদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে কেউ সম্মতি জানায়নি। এরমধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৭৯ ও ৫৪ আসন পাওয়ার পাশাপাশি ছোট দলগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে গঠন করতে যাচ্ছে জোট সরকার।
বিলওয়াল আরও বলেন, 'আমরা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যু সমাধানের কাজ করবো। পাশাপাশি কূটনৈতিক ইস্যুগুলোতেও নজর দেবো। আল্লাহ’র সাহায্যে প্রতিটি পাকিস্তানি নাগরিকের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করবো। প্র্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে। আমরা খুশি হয়েছি, পিএমএল-এন পাকিস্তান পিপলস পার্টির জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সমর্থন করেছেন। আশা করি, জারদারিই দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন।
জোট গঠনের ঘোষণার পর পিপিপি জানায়, দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করবে নতুন সরকার। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হবে সংসদে ভোটের মাধ্যমে, যা অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শেষদিকে। এরপর আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসবে, কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। তবে কোন দল সরকারের অন্যান্য পদে স্থলাভিষিক্ত হবেন সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সংবাদ মাধ্যম জিও নিউজ বলছে, শাহবাজ শরীফের মন্ত্রিসভায় থাকবে না পিপিপি।
অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ২০২২ সালে ইমরান খানকে জোরপূর্বক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ সেসময় বলেন, সংসদ এখন অনেক জটিল সংকট থেকে মুক্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তাকে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে ১০ বছররে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই মাসে নির্দেশনা দেয়া হয়, নির্বাচনে ব্যাট প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না পিটিআই। যে কারণে দলটির সব প্রার্থীকেই স্বতন্ত্র প্রতীকে দাড়াতে হয়।
ভোটে কারচুপির প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ করেছেন ইমরান খানের সমর্থকরা। ২৪ কোটি মানুষের দেশটিতে সরকার গঠনে দেরি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে অনিশ্চয়তা। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি সশস্ত্র বিভিন্ন গোষ্ঠীর সহিংসতা বেড়ে গেছে দেশটিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন, দেশের জন্য যে সরকার তাৎক্ষণিক যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ ফেব্রুয়ারি বসবে সংসদ অধিবেশন, যেখানে ভোটের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী।