ক্রিকেট
এখন মাঠে
0

শুধু ইতিহাস নয়, মোক্ষম জবাব দিলো আফগানিস্তান

যেকোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাক্রমশালী দলকে হারানো আফগানিস্তানের মতো দলের কাছে কেবল গৌরবের নয়- মহাগৌরবের ব্যাপার। কারণ ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে সফল দল তারাই। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি, সর্বাধিক ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি, কী নেই তাদের বিশ্বকাপ অর্জনের শো কেসে। সবই আছে। দল হিসেবেও আগাগোড়াই হট ফেভারিট। ব্যাটিং থেকে বোলিং যেকোনো দলের বিপক্ষে সমীহ জাগানিয়া মাইটি অস্ট্রেলিয়া।

ধারে ভারে আফগানদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে অজিরা। কিন্তু জায়ান্ট কিলারে পরিণত হওয়া আফগানরা মিচেল মার্শের দলকে মাটিতে নামিয়ে আনবে অজিরা তা আঁচও করতে পারেনি।

অথচ আফগানিস্তান তালেবান সরকার পরিচালনার কারণে সে দেশে নারীদের ক্রিকেট নিষেধ করে আফগানিস্তান। ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল সমালোচনায় পড়ে তালেবান সরকার। যে কারণে অস্ট্রেলিয়া আফগানদের বিপক্ষ তাদের মাটিতে দুই দুইবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বাতিল করে। আর্থিক ও নানাভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে আফগানিস্তানের ক্রিকেট। তাই রশিদ খান, মোহাম্মদ নাবীরা অস্ট্রেলিয়ার আতিথ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো। সেই অক্ষেপই হয়তো ঝাড়লো এবার আফগানিস্তান।

এ ম্যাচে হারলেই বাদ। এমন সমীকরণের ম্যাচে ১৪৮ রানের পুঁজি দাঁড় করেছিল আফগানিস্তান। যা অস্ট্রেলিয়ার কাছে কঠিন হওয়ার কথা নয়। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আফগানরা। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মহাকাব্যিক আর বীরোচিত ডাবল সেঞ্চুরিতে হারের লজ্জা থেকে অজিদের বাঁচিয়ে ছিল।

এবারও যখন একইভাবে অজি ব্যাটারদের টুটি চেপে ধরেছিল আফগানিস্তানের বোলাররা। আবারও দৃশ্যপটে ওই ম্যাক্সওয়েল। উড়িয়ে ঘুরিয়ে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আফগানদের স্বপ্ন ম্লান করছিলেন। কিন্তু আফগানদের ম্যাশজয়ী নায়ক গুলবাদিনের আঘাতে ম্যাক্সওয়েলের উইলো বাজি থামে।

সময়ের ব্যবধানে আফগানের পেস আর স্পিন বোলিংয়ে উড়ন্ত অস্ট্রেলিয়া মাটিতে পড়ে ধপাস করে। যেকোনো ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বিজয় এটি। ২১ রানের স্বপ্নীল জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন জিয়ে রাখলো আফগানিস্তান।

যে দেশটায় তালেবান শাসনে নারীদের ক্রিকেট নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে অনেক দেশই ক্রিকেট কূটনীতিতে আফগানিস্তানকে দাবিয়ে রেখেছে। সেই আফগানিস্তানই দিনের পর দিন ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার গল্প লিখছে। তাদের আটকে রাখার সাধ্য কার!

এখন এই আফগানিস্তানই সেমিফাইনালের স্বপ্ন বুনছে। নেট রানরেটে কিছুটা এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার মতো আফগানদেরও পয়েন্ট ২, শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় আর অজিরা ভারতের বিপক্ষে হারলে ইতিহাসের পাতায় আরও একটি গৌরবের অধ্যায় রচনা করবে রশিদরা।

আফগান ইতিহাসে লেখা আজকের এই জয় হয়তো ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় আসা তালেবান সরকারকে নতুন করে ভাবাবে। এই জয়ের মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট বঞ্চিত দেশটির নারীদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে। কট্টর সিদ্ধান্ত থেকে তালেবান সরকার এবার সরে আসতে পারে বলেও মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্বের বোদ্ধারা। তাদের ভাষ্য-কিংস্টোনের এই মহাকাব্যিক জয় আবারও সেদেশের নারীদের ক্রিকেট মাঠে নামার পথ বাতলে দিলো।