এরমধ্যে ৭ জনই নতুন মুখ, যারা প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের একমাত্র নারী সংসদ সদস্য হিসেবে সরাসরি ভোটে সংসদে যাচ্ছে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।
চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন পর্যটন ও বিনোদন ব্যবসায়ী এবং একইসাথে রাজনীতিবিদ মাহবুব উর রহমান রুহেল। ৮৯ হাজার ৬৪টি ভোট পেয়ে যিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৯৫ ভোট। আসনটিতে ভোট পড়েছে শতকরা ৩৯ দশমিক পাঁচ আট শতাংশ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টি। সে হিসাবে এবার তার ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল ভোট কম পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তিনিও একজন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী। এরআগে তিনি সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে এবারই প্রথম যাচ্ছেন সংসদে। যিনি চট্টগ্রামের একমাত্র নারী সংসদ সদস্য। পেয়েছেন ১ লাখ ৬৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফটিকছড়ির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৬ ভোট। ২০১৮ সালে এখানে মহাজোটের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজবিুল বশর মাইজভান্ডারি পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ভোট। সে হিসাবে এবার সনি প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার কম ভোট পেয়েছেন।
সন্দ্বীপে ৫৪ হাজার ৭৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় বারের মতো নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন আরও একজন ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান মিতা। চট্টগ্রাম-৩ আসনটিতে ২৬ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল উদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তুলনায় ১ লাখ ৮ হাজার ভোট কম পেয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে নতুন মুখ নৌকার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। যিনি পেশায় পোশাক খাত, হোটেল, ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায়ী। যেখানে মামুন পেয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৮ ভোট সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দিদারুল কবির পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৪৮০ ভোট। গেলবার এই আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন দিদারুল আলম।
চট্টগ্রামে যে দুটি আসন শরীকদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো তার একটি চট্টগ্রাম-৫ আসন। আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫১ ভোট। আসনটিতে ভোট পড়েছে ২০ দশমিক ছয় দুই শতাংশ। ২০১৮ সালে আসনটিতে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯০৯টি। এবার প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার ভোট কম পান তিনি।
এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের সবথেকে বেশি ভোট পড়েছে ৬ আসনে। যেখানে ৫ম বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন আরেক ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। পেয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ ভোট। তবে তার বিপরীতে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৫৯ ভোট।
চট্টগ্রাম-৭ আসন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। পেয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট। এ আসনিটতেই ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক চার তিন শতাংশ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোমবাতি প্রতীকের মুহাম্মদ ইকবাল হাছান পেয়েছেন ৯ হাজার ৩০১ ভোট। তবে গেল নির্বাচনে একই আসেন ২ লাখ ১৭ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী।
এবার নতুন মুখ পেলো চট্টগ্রাম-৮ আসন। ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসিবে জয়ী হয়েছেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান শিল্পপতি আবদুচ ছালাম। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরী পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ ভোট। এ আসনটি জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠকে ছেড়ে দেয়া হলেও, তিনি তৃতীয় হয়েছেন ভোটের মাঠে।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে দ্বিতীয় বারের মতো ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। যিনি গেল নির্বাচনে পেয়েছিলেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির সানজীদ রশীদ চৌধুরী পেয়েছেন ১ হাজার ৯৮২ ভোট।
৫৯ হাজার ভোট পেয়েছে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু, পেশায় ব্যবসায়ী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। তিনি পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৩৫ ভোট।
চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গা আসনে ৫১ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের এম আবদুল লতিফ। তিনিও পেশায় ব্যবসায়ী। তবে মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তার কাছে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে এবার প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ ভোট। আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীকে হারিয়ে জয় হন মোতাহের। সামশুল হক পেয়েছেন ৩৫ হজার ২৪০ ভোট।
গত বারের চেয়ে অর্ধেক ভোট পেয়ে আবারও চট্টগ্রাম-১৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোমবাতি প্রতীকের আবুল হোসাইন পেয়েছেন ৫১৪১ ভোট । আসনটিতে ভোট পড়েছে ৫৭.১৪শতাংশ। ২০১৮ সালে এ আসনে জাবেদ ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৫।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আরেক ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। পেয়েছেন ৭১ হাজার ১২৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৮৪ ভোট।
শিল্পপতি আব্দুল মোতালে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নতুন মুখ। তিনি পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট। আসনটির তিন বারের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে হারিয়ে জয়ী হন স্বতন্ত্র এ প্রার্থী। ২০১৮ সালে এ আসনে নৌকা প্রতীকে নদভী ভোট পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে ভোট শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক আগে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে প্রার্থীতা বাতিল হয় নৌকার প্রার্থী মোসতাফিজুর রহমানের। ২০১৮ সালে বাঁশখালী আসনে নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান। তিনিও পেশায় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। ভোট পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৪৯৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহ কবির লিটন পেয়েছেন ৩২ হাজার ২২০।
এছাড়া পর্যটন শহর কক্সবাজারের ৪ টি সংসদীয় আসন। সেখানে কক্সবাজার -১ চকরিয়া, পেকুয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান অব: মেজর জেনারেল সৈয়দ মো ইব্রাহিম। তিনি হাতঘড়ি প্রতীকে ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট পান। তার প্রতিদর্ন্ধী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৯৬ ভোট।
এছাড়া কক্সবাজারের বাকী তিনটি আসনে নৌকা জয়লাভ করেছে।
তিন পার্বত্য জেলার বান্দরবানে সপ্তমবারের মত সংসদ সদস্য হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর। তিনি ১ লাখ ৭২ হাজার ভোট পান। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে নৌকার প্রার্থী দীপংকর তালূকদার ও খাগড়াছড়িতে নৌকা প্রতীকে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বিজয়ের হাসি হাসেন।