ঘরের মাঠে একদিকে চলছে জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ আইপিএল, অন্যদিকে আগামী মাস থেকে শুরু নির্বাচন। সবমিলিয়ে মধুর সমস্যায় ভারতবাসী। বাজার, অলিগলি ও চায়ের কাপে আলোচনা চলছে, দিল্লির মসনদে কংগ্রেস নাকি আবারও বসবেন নরেন্দ্র মোদি।
১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন৷ সাত দফার এই লম্বা ভোটপর্ব চলবে ৪ জুন পর্যন্ত৷ প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেবেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে রেকর্ড। যাদের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ভোটার প্রথমবার ভোট দেবেন। বরাবরের মতো এবারও নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের আনন্দ বাকিদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সামাজিক মাধ্যমে অমোচনীয় কালিসসহ আঙুলের ছবি পোস্টও করবেন অনেকেই। যদিও এই কালির মধ্যেই জড়িয়ে আছে এক লম্বা ইতিহাস। চলুন জেনে নেই আদ্যেপ্রান্ত।
ভোট প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ১৯৬২ সালে প্রথমবার অমোচনীয় কালি ভোটারদের আঙুলে লাগানো শুরু হয়৷ যেহেতু এই কালি সহজে মোছে না, তাই একজন ভোটার যাতে দু'বার ভোট না দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেয় ভারতীয় নির্বাচন কমিশন৷ আর এই কালি তৈরিতে এক নম্বর প্রতিষ্ঠান মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড। শুধুই ভারতে নয়, গোটা এশিয়াতেই মাইসোর কারখানাতে তৈরি হয় ভোটের কালি। আর এখান থেকেই পৌঁছে যায় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সহ ২৫টি দেশে।
এবারের লোকসভা নির্বাচন ঘিরে কর্নাটকের মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ কারখানায় চলছে কালি তৈরির কাজ। কর্মীদের ব্যস্ততা বেড়েছে দ্বিগুণ। যাচাই-বাছাই করে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে নির্বাচনি কালি। রাসায়নিক পদার্থ, সিলভার নাইট্রেট দিয়ে তৈরি এই কালি বেশ দামি উপাদান, যাতে মিশানো রয়েছে রুপো। এই সিলভার নাইট্রেট চামড়ার লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রং বদলে হয়ে যায় বেগুনি। আর সেই রং মোছা যায় না, হাতের চামড়ায় যা স্থায়ী হয় প্রায় দুই সপ্তাহ।
মাইসোর কারখানার ম্যানেজার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইরফান জানান, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ২৬ লাখ ৫৫ হাজার বোতল কালি তৈরি করছেন তারা। প্রতি বোতল কালির দাম পড়বে ১৭৪ রুপি।
মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেডের কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিশালাক্ষী বলেন, 'ম্যানেজার লোকসভা নির্বাচনের সময় বাড়তি চাপ থাকে, আমরা ১২০ জন আউটসোসিং সদস্য নিয়োগ দিয়েছি। এবার ২৬ লাখ ৫৫ হাজার বোতল কালি তৈরি করবো। প্রতিদিন আমরা ৮০ হাজার বোতল তৈরি করছি।'
মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইরফান বলেন, 'নির্বাচন কমিশনরে নির্ধারিত দাম অনুসারে প্রতি বোতলের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭৪ রুপি। যার খরচ আলাদা আলাদা রাজ্য নির্বাচন কমিশন বহন করবে। এই কালি উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হল সিলভার নাইট্রেট।'
প্রায় ৭শ মানুষের হাতে প্রতিটি ১০ মিলিলিটারের একটি বোতলের কালি ব্যবহার করা যায়। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড ভারতের একমাত্র অনুমোদিত কোম্পানি যারা নির্বাচনি কালি উৎপাদন করে আসছে। পাশাপাশি, সরকারি গণপরিবহনের জন্য রঙ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।