এসিআই কোম্পানির চেতনানাশক ওষুধ হেলোসিনের দুটি বোতল। সাধারণ চোখে দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটি আসল কোনটি নকল।
অথচ গত ৭ থেকে ৮ মাস ধরে খৎনা বা বিভিন্ন সার্জারি পরবর্তী মৃত্যুর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই নকল ওষুধের ছয়লাবকে। যদিও শিশুদের খৎনার ক্ষেত্রে অ্যানসথেসিয়া প্রয়োগের দক্ষতাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
গত জুনে হ্যালোথেন উৎপাদনকারী একমাত্র কোম্পানি উৎপাদন বন্ধের ঘোষণার পর বাজারে তীব্র চাহিদা তৈরি হয় হ্যালোথেনের। এই সুযোগে নকল হ্যালোথেন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ানসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, 'বাজারে জুন মাসে হ্যালোথেন বন্ধ করে দেওয়ায় হয়। তবে তারা কোথায় পাচ্ছে সন্দেহ হয়। নকল দেখতে পাচ্ছি এখন।'
অব্যাহত মৃত্যুর ঘটনা থেকে তৈরি হওয়া সন্দেহের প্রমাণ মিলেছে বিসিএসআইআর এর ল্যাবে পাঠানো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত হ্যালোথেনের নমুনাতেও।
ডা. দেবব্রত বনিক বলেন, 'পরিক্ষা করে দেখতে পাই এইটা নকল করা হয়েছে তাই রোগীর সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু বৈধ পথে হ্যালোথেন আসছে না। তাই আমরা সরকারকে জানালাম এইটার ব্যবহার, সরবরাহ, বিক্রয় সবকিছু নিষিদ্ধ করতে হবে।'
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নতুন যে দুটি বিকল্প ওষুধ ব্যবহারের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে সেটির জন্য দেশের সব প্রতিষ্ঠানেই বদলাতে হবে মেশিন। যা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয় এবং এই ওষুধ দুটির দামও হ্যালোথেনের ৬ গুণ, যা খরচ বাড়াবে সার্জারির।
তিনি আরও বলেন, 'নতুন হ্যালোথেনের জন্য যন্ত্র সবার কাছে নেই। কিন্তু যন্ত্র না আসা পর্যন্ত এই ঔষধ কিভাবে ব্যবহার করা যাবে তার একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দিয়েছি।'
তবে নতুন ওষুধ দুটির নকলও যে বাজারে আসবে না সেটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুস সবুর বলেন, 'নকল ঔষধ বাজার থেকে তুলে নেওয়া এইটা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্বের উপর পরে। তারা তা না করে বিকল্প দুটো ঔষধ নিয়ে এসেছে এবং তার জন্য মেশিনে পরিবর্তন আনতে হবে। এই মহাযজ্ঞ কবে শেষ হবে আমরা জানি না।'
এক্ষেত্রে হাসপাতাল ছাড়া খোলা বাজারে এসব ওষুধ সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন অ্যানেসথেসিওলজিস্টরা।
নকল হ্যালোথেন ছড়িয়ে পড়ায় চেতনা নাশক আসল নকল সব হ্যালোথেন বিক্রি ও প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে সত্যিকার অর্থে এর ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে রোগীদের শারীরিক জটিলতা ও অনাকাঙ্খিত মৃত্যু বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।