অন্য ফিলিস্তিনি মায়েদের মতো হিন্দ আল নাওয়াজা প্রতিদিন পাড়ি দিচ্ছেন মাইলের পর মাইল পথ। কিন্তু অপেক্ষায় থাকা শিশুদের জন্য খাবার নিয়ে তারা ফিরতে পারবেন কি না, নেই সেই নিশ্চয়তা। চার সন্তানের জননী বোন মাজুজা আল সুলতান ত্রাণ নিতে গিয়ে একটুর জন্য ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলি থেকে প্রাণে বেঁচেছেন।
আল নাওয়াজা বলেন, ‘বাইরে যাচ্ছি, হয় মরবো, না হয় আহত হবো। জীবিত ফিরলে বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে ফিরতে পারবো। কিন্তু যদি খাবার নিয়ে না ফিরি, বাচ্চারা কান্না করবে।’
মাজুজা আল সুলতান বলেন, ‘শেষবার খালি হাতে ফিরেছিলাম। বাচ্চার জন্য চামচ আর প্লেট নিয়ে এসেছিলাম। চেয়ে দেখলাম, বাচ্চা কাঁদছে। এরপর আমিও কেঁদে দিলাম। তিন থেকে চার কিলোমিটার হাঁটলে পায়ের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়।’
এদিকে গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালের অবস্থাও বেশ করুণ। ইসরাইলের হামলায় হাসপাতালের কাছে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিদের প্রাণ গেছে। এই ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে মসজিদের কাছে টাঙানো একটি তাবুতে। হামলায় সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারান ১২ জন। শেষ বিদায় জানাতে যাদের স্বজনেরা ভিড় করেছেন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
স্বজনদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার বোনের ১৪ বছর। নিরপরাধ এই মেয়েকে কেন মারা হলো। আল্লাহ নিশ্চয়ই শাস্তি দেবেন। পরিবারের কেউ শহীদ হয়েছে, হয়তো আল্লাহ'র ইচ্ছায়।’
অন্য একজন বলেন, ‘আল শিত ক্যাম্পের আল সৌসি মসজিদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। মিসাইল পড়লো যেখানে বাচ্চারা ছিল, সেখানে। এরপর লাশ নিয়ে আল শিফায় আসলাম।’
এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবারও গাজায় ত্রাণ নিতে এসে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত নেতজারিম করিডোরে ত্রাণ নিতে এসে একদিনে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি শরণার্থীর। ত্রাণের বহর প্রবেশের অনুমতি দিয়ে গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপরই হামলা করছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এতে করে নতুন করে উপত্যকায় বাড়ছে লাশের মিছিল।