উঁচু-নিচু বরেন্দ্রের ফল শস্যের ভাণ্ডার, সমতলের ধান-পান আর খাল-বিলের সাথে মাছ চাষের উর্বরা জনপদ রাজশাহী। দেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে ভৌগোলিকভাবে কোনঠাসা এ জনপদ বিগত ১৫ বছরে গড়ে তুলেছে নগরের সবুজ বিপ্লব, পথঘাটের প্রশস্ততা আর আধুনিক শহরের তকমা।
সদরসহ ৯ উপজেলার রাজশাহী জেলায় এবারের নির্বাচনের তফসিলের সময় থেকেই পরিবর্তনের গল্প শোনা গেছে রাজনীতির পাড়ায়। দলগুলোর দলীয় মনোনয়নে আসে পরিবর্তন ।
দলীয় বাধা না থাকায় আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তৃণমূলের অনেক নেতা। বিগত সময়ের থেকে রাজশাহীর ছয়টি আসনে বাড়ে প্রার্থীর তালিকা। ছয়টি আসনে নৌকার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, বিএনএম, জাতীয় পার্টি, জাসদ, স্বতন্ত্রসহ ৪১ জন প্রার্থী। তাতে হেভিওয়েট নৌকার প্রতিটি প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। পানসে রাজশাহীর নির্বাচন জমে ওঠে সদর আসনে দুই বাদশার লড়াইয়ে।
৭ জানুয়ারি রাজশাহীর ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৪ ভোটার ৭৭০টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সদরের চেয়ে এ নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে গ্রামাঞ্চলে। মনোনয়ন-স্বতন্ত্রের প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ ভোটারদের মনে স্বস্তি আনে।
রাজশাহী-১ তানোর-গাদাগাড়ী আসনে ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হয় ত্রিমুখী। বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে আয়েশা আক্তার ডালিয়া, ঢাকাই নায়িকা মাহিয়া মাহী এবং স্থানীয় পৌর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানীর মধ্যে প্রচারণার মাঠ ছিলো গরম।
তবে নির্বাচনে সকলকে কিছু ছাপিয়ে ওমর ফারুক চৌধুরীর ওপরই আস্থা রাখেন বরেন্দ্রের মানুষ। তিনি ভোট পান ১ রাখ ৩ হাজার ৫৯২টি আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম রাব্বানী পান ৭৪ হাজার ২৬১টি ভোট।
রাজশাহী-২ আসনে দুই বাদশার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবার কথা থাকলেও জনপ্রিয়তার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। নৌকাকে বিজয়ী করতে পারেননি তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমানের কাছে পরাজিত হন ২৩ হাজার ৪৪০ ভোটের ব্যবধানে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রাজশাহী তিন আসনের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুস সালাম খাঁন ভোট পান ৫ হাজার ২৭৪ টি ভোট।
একইভাবে ৫৪ হাজার ১৭১ টি বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ভোট পান ৫৩ হাজার ৮১২টি।
তবে, লড়াই হয়েছে রাজশাহী-৫ আসনে। পুঠিয়া-দুর্গাপুরের এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবাইদুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াদুদ দারার কাছে হেরেছেন মাত্র ৩ হাজার ৫১ ভোটে।
রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ আসন ছিল রাজশাহী-৬ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান। তবে নিজের পরিশ্রমে আর তরুণদের সমর্থনে ২৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।