ব্যক্তি থেকে পরিবার। পরিবার থেকে রাষ্ট্র। সবকিছুর পেছনেই চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে দৈনিক, মাসিক বা বাৎসরিক আয় ব্যয়ের পরিকল্পনা। এ আয়-ব্যায়ের পরিকল্পনাটাই মূলত বাজেট।
এই যেমন সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালীপাড়া ইউনিয়নের খেটে খাওয়া গ্রামীণ মানুষগুলো। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে গঞ্জের চায়ের দোকানে তাদের রোজকার গল্প আড্ডা। এখানে চায়ের কাপের সাথে দিনের আয় ব্যয়ের হিসাবটা কষতে, তারা যতটুকু পারদর্শী- তারচেয়ে জাতীয় বাজেটের আলোচনা এলেই তারা ঠিক ততটাই অনাগ্রহী।
স্থানীয়দের একজন বলেন, 'বাজেট নিয়ে সাধারণ জনগনের মাথাব্যাথা নেই। বাজেট সরকার করবে আর এতে জনগণের ভোগান্তি।'
অর্থনীতির এসব মারপেঁচ তারা হয়তো বুঝেন না। তবে তারা চান, বাজেট যেমনই হোক বাজারে নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টেনে ধরতে হবে। তারা চান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার। চান কৃষকের শ্রমে ঘামে উদপাদিত ফসলের মূল্য।
আরেকজন বলেন, 'বাজেট নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা নেই। আমাদের ধানের দাম কম চালের দাম বেশি। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ আমরা চাই বাজার নিম্নমুখী হলে আমাদের জন্য ভালো।'
স্বাধীন বাংলাদেশে এ যাবত অর্ধশতাধিক তথা ৫২টি বাজেট পেশ করা হয়েছে মহান জাতীয় সংসদে। ১৯৭১ সালে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ওই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের পথে। বাজেটের আকার বাড়তে বাড়তে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুইঁ।
বেলা ৩টার দিকে জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তার সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। এই বাজেটে সরকারের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বাড়ানো। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, 'সামষ্টিক অর্থনীতি স্থীতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক দেশে এখনো ৬০ শতাংশের উপরে মুদ্রাস্ফীতি আছে। জনগণকে কীভাবে এর থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বাজেটে রাখা হয়েছে।'
সবমিলিয়ে বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন বরাদ্দ ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বাজেটে যে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে, তা মেটানোর জন্য সরকার বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ১ লাখ ২৭ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে এই বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।'
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা, রিজার্ভ ঘাটতি ও ডলার সংকট সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে হিসেবের যাতাকলে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই তাদের জন্য বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা। নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মৌলিক অধিকার।
চলমান অর্থবছর থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা করা হতে পারে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।