কয়েকবছর ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সবার উপরে শুধু চীন। তবে বিশ্ববাজারে চীন ও বাংলাদেশের রপ্তানি পরিসংখ্যান যোজন যোজন ফারাক। যেখানে চীনের হিস্যা প্রায় ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশের মাত্র ৭ শতাংশ।
শুধু কী তাই? তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সেখানেও এগিয়ে চীন। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে চীন। বাংলাদেশ সেখানে রপ্তানি করে মাত্র ৮ থেকে সাড়ে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের সে আধিপত্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। দেশটি থেকে পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশের পর পাল্টে যায় হিসাব নিকাশ।
চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কী লাভ? এমন প্রশ্ন যখন ব্যবসায়ী মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে তখন জিএসপি না পাওয়া দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি গেল সেপ্টেম্বর থেকে বাড়ছে। অন্যদিকে চীনে কমতে শুরু করেছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। তৈরি পোশাক উৎপাদনে তাই ভিয়েতনামের চেয়েও এখন ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় দেশ বাংলাদেশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানীতে। তাই বাড়তি সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের।
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমাদের যে ক্যাপাসিটি আছে সেটা ব্যবহার করতে হবে। এইটা একটা চ্যালেন্জ। আর এই চ্যালেন্জ ওভারকাম করতে পারলে আমরা এই সুযোগ নিতে পারবো।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘এই সুযোগ আমরা কতখানি কাজে লাগাতে পারবো তা নির্ভর করবে আমরা আমাদের প্রোডাক্টিভ ক্যাপাসিটি কতটুকু ব্যবহার করছি।’
বাংলাদেশ বরাবরই ক্রেতাদের কাছে গুরুত্ব পায় পোশাকের কম দাম আর কম উৎপাদন খরচ বিবেচনায়। যেখানে তৈরি পোশাক ব্যতীত অন্য পণ্যের রপ্তানি একেবারেই নগণ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের এ সুযোগে সে সমস্যার কি সমাধান মিলবে?
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘তাদেরকে আমাদের এখানে প্রথমত ইনভাইট করা এখন। কিন্তু তার আগে তারা জানতে চাইবে আমাদের এইখানে বিদ্যুতের খরচ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে কিনা।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকা বাংলাদেশের বড় প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তুলা আমদানির অফার দিয়ে পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা তাদের।
অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ট্রাম্পের যে ট্রেড পলিসি এইটা বিশ্ব বাজারে বড় রকমের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। আমরা যদি সেখানে রপ্তানি বাড়াতে চাই তাহলে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অটেক্সার সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর সময়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৫২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের পরিমাণ ছিল ৬৭৬ কোটি ডলার।