শিল্প-কারখানা , আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

দিন দিন উজ্জ্বল ব্যাটারি শিল্পের ভবিষ্যৎ

দেশে সময় পরিক্রমায় উজ্জ্বল হচ্ছে ব্যাটারি শিল্পের ভবিষ্যৎ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ট্র্যাক, আইপিএসে ব্যবহার হচ্ছে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে পণ্যের উৎপাদন। কাঁচামালের সহজলভ্য, শুল্ক কমানো, বন্দরে পণ্য খালাসের সময়সীমা কমিয়ে আনা গেলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে এই শিল্প।

পিচঢালা পথে যে চাকা ঘোরে তার সাথে অর্থের নিবিড় সম্পর্ক আছে। কামরুল মিয়া নামের এক অটোরিক্সা চালক তা-ই বলছিলেন। কেমন করে গ্রাম-থেকে নগর জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির ত্রাতা হয়ে উঠলো ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।

কামরুল মিয়া বলেন, ' দিন শেষে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা থাকে। সব দিনে তো এক হয় না। বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন রকম ইনকাম হয়। এর বাইরে বড় অটোগুলো যারা চালায় তারা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকাও আয় হয়।'

তার মতো অগনিত চালকের কাছেও ব্যাটারি চালিত এই বাহনের সাথে অসীম অভাব দূর করে সীমিত সম্পদে স্বচ্ছলতার নানা সফল শব্দমালা মিশে আছে।

এসব অটো পরিবহন বা অন্য ক্ষেত্রে শক্তি সঞ্চারের জন্য তিন ধরনের ব্যাটারির মধ্যে লেড এসিডে তৈরি গুলো অন্যতম যা তৈরীর কাচামালের ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয় কোরিয়া সিঙ্গাপুর, চীন থেকে। আমদানি করা সীসা গলিয়ে প্রথমে তৈরী করা হয় প্লেট। সিসা কিউরিং হয়ে গেলে পাঠানো হয় হিটিং ওভেনে। প্লেট গুলো ড্রাই হয়ে গেলে মান পরীক্ষা করা হয় বয়লার রুমে। এরপর পেইন্টিং মেশানো প্লেট চলে আসে মিক্সিং বিভাগে। এই বিভাগের কাজ শেষ হলে লোড দেওয়ার পালা।

কিউরিং চেম্বারে গ্রেড ঠিক করা হলে ব্যাটারি চলে যায় ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ সেডে, সেটিংয়ের পর আরও একধাপ মান পরীক্ষা। তারপর প্লাস্টিক মোল্ডিং মেশিনে নির্দিষ্ট আকারের বক্স তৈরী করা হয়। পরে প্লেটগুলো আনলোডিং বিভাগে ওয়েট চার্জের পালা। প্রিন্ট হয়ে গেলে কনবেয়ার বেল্ট দিয়ে উৎপাদিত পণ্য পাঠানো হয় লিড এসিড বিভাগে। এরপর মেড ইন বাংলাদেশের ব্যাটারি সক্ষমতার পরিচয় বহন করে চলে আসে বাজারে।একজন অটোচালক বলেন, 'যে ব্যাটারি ভালো চলে সেটা এক বা দুই বছরও চলে যায়। ভালো ব্যাটারি থেকে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।'

সম্ভাবনময় ও উদীয়মান যে কয়টি শিল্পখাত রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম এই ব্যাটারি শিল্প। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ পিস ব্যাটারি উৎপাদন হয় নানা শিল্প কলকারখানায়। ভ্যবসায়ীরা বলছেন ১৫ থকে ১৭ হাজার কোটি টাকার এই শিল্পখাতটি দারুনভাবে জড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতির সাথে।

মোড়কীকরণের পর ব্যবহার উপযোগী ব্যাটারি সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে চলে যায় অন্তত ২৫টি দেশে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় শতভাগ দেশীয় কোম্পানি গুলো পূরণ করে। মোট চাহিদার কোন অংশ ই আমদানি করতে হয় না।

ব্যাটারি রপ্তানিকারক সমিতির তথ্য বলছে, ১৫ শতাংশ নগদ প্রনোদনায় রপ্তানি বেড়েছে। বছরের রপ্তানি হয় ৭ থেকে ৮ লাখ পিস ব্যাটারি। দেশে ছোট বড় মিলিয়ে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০ টি। যথাযথ উদ্যোগ হাতে নিলে এই শিল্পের আকার বড় হবে বলে আশা ব্যবসায়িদের

ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য ফারাজ এ রহিম বলেন, 'আইপিএসের ব্যাটারি, কমার্শিয়াল ট্রাক, বাসের ব্যাটারি, গাড়ির ব্যাটারিতে লোকালদের ভালো একটা হোল্ড আছে। এখান থেকে এডভান্সমেন্টও আসছে। আমাদের ব্যাটারি বাইরের দেশের যারা নেয় তারা কিন্তু জানে আমমরা ভালো কোয়ালিটির ব্যাটারি দই। বিভিন্ন দেশে রপ্তারি করার ক্ষেত্রে আমাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ডিউটি ফ্রি। এটা যখন হয় তখন আমরা বড় বড় মার্কেটে কম্পিট করতে পারি।'

ব্যাটারি তৈরির বাকি ৫০ শতাংশ কাঁচামাল দেশেই পুনরুৎপাদন বা রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে পাওয়া যায়, আর এটি এগিয়ে রাখছে শিল্প টি কে। যার কারণে ধীরে ধীরে বিদেশ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসেছে এই শিল্প। ব্যক্তি খাতের একক প্রচেষ্টায় বাজার বড় হয়ে উঠেছে, তাই এই শিল্প বিকাশে দরকার সরকারে সহায়তা। দেশে ড্রাইসেল, লেড এসিড, লিথিয়াম এই তিন ধরনের ব্যাটারি তৈরি হয়।

এসএস