উত্তরের শস্যভাণ্ডারখ্যাত সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। আশির দশকে এখানে গড়ে ওঠে ছোট-বড় এক হাজার ৮শ' হাসকিং মিল। কালের বিবর্তনে হাসকিং মিলগুলোর এখন জীর্ণদশা। শ্রমিকদের ব্যস্ততায়মুখর থাকা চালকলগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ছেয়েছে আগাছায়। আবার বন্ধ হওয়া অনেক চালকল আর চাতালে গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক কারখানা।
এমনই এক হাসকিং মিলের মালিক মহাদেবপুর উপজেলার গোলাম সারোয়ার সাদি। পড়াশুনা শেষ করে ২০০৭ সালে শুরু করেন চালকলের ব্যবসা। মুনাফা থাকায় ব্যবসাও চলছিলো বেশ। কিন্তু অটো রাইস মিল আসার পর ২০১০ সালের পর ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এখন ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
একই অবস্থা অন্য হাসকিং মিলগুলোর। বাড়তি উৎপাদন খরচ এবং অটোরাইস মিলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়েছে ৭৮ শতাংশ মিল। এসব চালকলে উৎপাদনে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়া খরচও অনেক বেশি। এর বিপরীতে অটো রাইস মিলগুলোতে অল্প সময়ে বেশি চাল উৎপাদন করে।
জেলার হাসকিং মিলগুলোতে একসময় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। বন্ধের কারণে এখন বেকার হয়ে পড়েছে ৩৫ হাজার শ্রমিক। আবার মজুরি কম হওয়ায় পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
চালকল রক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের দাবি মালিক সমিতির। এছাড়া সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতাও নির্ধারণ করে দিলে ক্ষুদ্র রইস মিলগুলো টিকে থাকতে পারে বলে জানান নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী- জেলায় চালকলের সংখ্যা ৩৯৮টি। এরমধ্যে হাসকিং ৩২০টি এবং অটোরাইস ও আতব চালকল ৭৮টি।
নওগাঁ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর রহমান জানান, 'মিল সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ যে হাসকিং মিলগুলো ছিল তারা অর্থনৈতিক কারণে এবং অটো মিলগুলোর সাথে টিকতে না পেরে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে'।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও চালকল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে বছরে প্রায় ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। প্রতিদিন উৎপাদন হয় প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন চাল। ৫০ হাজার টাকা টন হিসেবে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা।