দেশে এখন
হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা অপরাধ ছেড়ে অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে
একসময় হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অনেকেই মাদক ও চোরচালানের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অনেকেই অপরাধের পথ ছেড়ে ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। ঝুঁকছেন কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রাজনগর গ্রামের একজন আব্দুল মজিদ। একসময় জড়িত ছিলেন মাদক ও চোরচালানের সাথে, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারও হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহীনির হাতে। তবে সময়ের সঙ্গে বদলে অন্ধকার ফেলে ফিরেছেন আলোর পথে।

এখন শুরু করেছেন সবজি চাষ ও পাইকারি ব্যবসা। প্রতি মাসে আয় করছেন ৫০ হাজার টাকার বেশি। আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি বেড়েছে তার সামাজিক আত্মসম্মানবোধ।

আব্দুল মজিদ বলেন, 'আগে যে ব্যবসা করতাম সেটা আর এখন যে ব্যবসা করি তার মধ্যে অনেক তফাত আছে। এখন মুখ উচু করে কথা বলতে পারি। এখন সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি। আগে কথা বলার মতো কোনো সাহস ছিল না।'

শুধু মজিদ নয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এমন বিপথে ছিলেন এ গ্রামের অনেকেই। তবে এখন বেশিরভাগই ছেড়েছেন সেই পথ। তাদের কেউ ব্যস্ত কৃষিকাজ কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে, কেউ আবার পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশেও। এতে একদিকে ফিরেছে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা, তেমনি অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে।

স্খানীয় একজন বলেন, 'আগের যে ব্যবসা ছিল তা এখন আগের মতো কারও মাঝে নেই। এখন যে যার মতো কাজ করে খাচ্ছে। কেউ বিদেশ গেছে, কেউ কৃষি কাজ করছে আবার কেউ ব্যবসা করছে।'

মাদক ও চোরাচালন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কাজ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের লোকজন। তাদের উদ্যোগে গঠণনকরা হয়েছে মাদক নির্মূল কমিটি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।

মাধবপুর রাজনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম এরশাদ বলেন, 'চোরাচালান তো এখন বলতে গেলে একেবারে নাই। সর্বোচ্চ হইলে ১০ শতাংশ চোরাচালান হতে পারে।'

মাধবপুর চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান সোহাগ বলেন, 'বিজিবি, পুলিশ ও এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা অনেক মিটিং করেছি। মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। আগের চেয়ে বর্তমানে মাদক, চোরাচালান অনেক কম। কিছুকিছু পরিবার আছে যারা এখনও এগুলো করছে। প্রায়ই এর প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসন এদের ওপর কাজ করছে।'

২০২০ সালের জুলাইয়ে বিজিবির কাছে আত্মসমর্পণ করে ৭৫ জন মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। নতুন করে আবারও এমন উদ্যোগ নিলে এসব অপরাধ আরও কমে আসবে বলে মনে করে প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞরা।

সিনিয়র আইনজীবি হাফিজুল ইসলাম বলেন , 'সন্ত্রাসীদের কাজের বিনিময়ে সন্ত্রসী কার্যক্রম থেকে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইতিমধ্যে। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা হয়নি। আমরা আশা করি সরকার এদিকে নজর দেবেন।'

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, 'মাদকের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তার যত বড় ব্যাকগ্রাউন্ডই থাকুক না কেন তাদের কোনো ছাড় নেই। যারা মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সেবী, তাদের অনুরোধ জানাবো তারা যেন সঠিক পথে চলে আসে।'

বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, বর্তমানে মাধবপুর উপজেলা ধর্মঘর ও চুনারুঘাটের ছিমটিবিলসহ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে মাদক ও চোরাকারবারীরা। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

এমএসআরএস