বিদেশে এখন
ছয় দিনের ইউরোপ সফরে শি জিনপিং
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন চীনের সাথে ইউরোপের দেশগুলোর চলমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, ঠিক এমন পরিস্থিতিতে ছয় দিনের ইউরোপ সফরে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল রোববার (৫মে) বিকেলে ফ্রান্সে পৌছে সফর শুরু করেন তিনি।

আজ সোমবার ( ৬ মে) দেশটির প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ'র সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শি জিনপিং। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে চীনের অবস্থান বিষয়ে ইইউ'র দেশগুলোর সাথে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, এ সফরে তা কিছুটা শিথিল হবে এমন আশা করছে বেইজিং।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে ইউরোপ সফরে শি জিনপিং যে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন সে তুলনায় এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। ইউক্রেনের চলমান আগ্রাসনের মধ্যে রাশিয়ার সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখায় ভূ-রাজনীতিতে চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউরোপের দেশগুলো। এর আগে ২০২২ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইইউ। চীনের প্রতি নির্ভরতা কমাতে প্রণয়ন করা হয় নতুন আইন।

বিশেষ করে গত সপ্তাহে চীন ও ইউরোপের মধ্যে উইন্ড টার্বাইন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বেচা-কেনার নানা দিক খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ইইউ। এছাড়া বেইজিংয়ের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'নুকটেক' এ অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের তদন্ত কর্মকর্তারা। এদিকে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অন্তত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা কোনো না কোনো ভাবে চীনের সাথে সম্পৃক্ত এমন অভিযোগও উঠেছে।

এই সফরের মধ্য দিয়ে বেইজিং প্রমাণ করতে চাইবে কিছু দেশ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করলেও, ইউরোপের বাকি দেশগুলোর সাথে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ আছে। এদিকে, চীনের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্কের ব্যাপারে স্বাধীন নীতি দরকার বলে মন্তব্য করেছেন চীনে নিযুক্ত সাবেক ফরাসী রাষ্ট্রদূত সিলভি বারম্যান।

সাবেক ফরাসী রাষ্ট্রদূত সিলভি বারম্যান বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব নীতিতে অটুট থাকতে চাই। আমেরিকানদের অনুসরণ করতে চাই না। আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ইইউ'র উদ্বেগের বিষয় নয়।’

কোভিড মহামারির কারণে চীনের অর্থনীতি এমনিতেই কিছুটা চাপের মুখে। তাই চীন চায় না ইউরোপের দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক। বিশেষ করে নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জিতবেন সেটা যখন অনিশ্চিত তখন বেইজিং কোনভাবেই ইউরোপের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক ধরে রাখার বিষয়ে ছাড় দেবে না।

সাবেক ফরাসী রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভবিষ্যতে চীন আরও বেশি আলোচনায় আসবে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সমঝোতার বিষয়টি মনে রাখবেন। আমরা মনে করি, বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

শি জিনপিংয়ের সফর উপলক্ষে সোমবার প্যারিসে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছেন ম্যাক্রোঁ। সেখানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধানও উপস্থিত থাকবেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের অফিস জানিয়েছে, আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ রাজনৈতিক ইস্যুগুলো প্রধান্য পাবে। পাশাপাশি ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধে রাশিয়াকে চীনের মাধ্যমে চাপ রাখতে চাইবে ফ্রান্স।

ইএ