পরিবেশ ও জলবায়ু
প্রকৃতির বৈরিতায় বিপর্যস্ত বিশ্বের নানা প্রান্ত
প্রকৃতির বৈরিতায় বিপর্যস্ত হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্ত। বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তর আফ্রিকার পর হু হু করে প্রাণহানি বাড়ছে ব্রাজিলে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে কেনিয়ায়। উত্তর আফ্রিকায় সাড়ে ৩০০ প্রাণহানি ছাড়িয়েছে। উল্টোদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। ভারতে দাবদাহে প্রাণহানি বাড়ছে।

ভয়াবহ বন্যার কবলে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল। শক্তিশালী মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় ও ভারি বৃষ্টিতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল। শনিবারের এই দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ অর্ধশতাধিক। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। রাজ্যের ১৩৪ পৌরসভায় বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে ৫ লাখের বেশি বাসিন্দা দিন পার করছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সংকটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল রাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছে রাজ্য সরকার। মুহূর্তের মধ্যে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অনেকের অবস্থান এখন আশ্রয়কেন্দ্র।

বাড়ির কী অবস্থা জানি না। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর বাড়ি তৈরি করেছিলাম। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।

গত ৪০ বছরে এমন বন্যা হয়নি। হঠাৎ করেই পানি বিপদসীমার ওপর উঠে গেলো। এমন বন্যা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিলো।

রাজ্য দিয়ে বয়ে চলা গুয়াইবা নদীর পানি বইছে শহর দিয়ে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা না থাকায় পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা আবহাওয়া দপ্তরের। তবে রাজ্যবাসীর জন্য সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা বলেন, 'রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে শতভাগ সহায়তা দেয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করা সম্ভব, আমরা সবধরনের কাজ করতে প্রস্তুত আছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সবার আগে জীবন বাঁচানো জরুরি।'

ব্রাজিলের পাশাপাশি বন্যায় বিপর্যস্ত আফ্রিকা। মহাদেশটির উত্তরের দুইদেশ কেনিয়া ও তানজানিয়ায় প্রাণহানি ছাড়িয়েছে সাড়ে ৩শ'র গন্ডি। শুধু কেনিয়াতেই নিহতের সংখ্যা ২শ' ছুইছুই। ভারি বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙ্গে নিখোঁজ শতাধিক বাসিন্দা। প্রতি মুহূর্তে পানির তোড়ে ভেসে আসছে মরদেহ।

এরমধ্যেই দেশটিতে ঘূর্ণিঝড় হিদায়া আঘাত হানার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে রাজধানী নাইরোবিসহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয়। তাই পূর্ব সতর্কতার আওতায় কেনিয়ার ১৭৮টি জলাধার ও বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।

ভারি বৃষ্টিতে যখন দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায় জনজীবন বিপর্যস্ত, ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। দিনভর সূর্যের তপ্ত আলোয় তাপপ্রবাহে নাকাল ভারতের বাসিন্দারা। ওষ্ঠাগত জীবনে এক পশলা বৃষ্টির জন্য চলছে হাহাকার। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি কেরালা, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রির ওপরে। জলবায়ুর এমন বিরূপ আচরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ।

বাসায় ৩টি ফ্যান থাকা সত্ত্বেও থাকতে পারছি না। তাপমাত্রা এতটাই বেশি যে বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এল নিনো চক্রের কারণে প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ দেখছে বিশ্ববাসী। আগামী কয়েক দশকে পাল্টে যাবে জলবায়ুর প্রকৃতি। বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে দাঁড়াবে নৈমিত্তিক ঘটনা।

ন্যাচারাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট সেন্টারের গবেষক পেদ্রো কামারিনহা বলেন, 'আগামী দশকগুলোয় এল নিনো ও লা নিনা চক্রগুলো চরম খরা ও বন্যার দিকে নিয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যবশত এগুলো ঘন ঘন ঘটবে যা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।'

মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করছে ৪৫ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ১৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখেছে কাম্বোডিয়া। তাপপ্রবাহে জলাধার শুকিয়ে ফিলিপিন্সে ভেসে উঠছে একটি আস্ত শহর। পুরোনো জাহাজ ও গির্জা পরীক্ষা করতে প্রতিদিন শহরটিতে যাচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ থেকে শুরু করে দর্শনার্থীরা।

এভিএস